হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীকে। এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে। এর মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেল আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর।
কারণ মাদ্রাসার বর্তমান মহাপরিচালক আল্লাহ শাহ আহমদ শফীর অবর্তমানে সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদই ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালক। আর হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হলে পদাধিকার বলে মাওলানা শেখ আহমদ হেফাজতে ইসলামের আমীর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।
বুধবার (১৭ জুন) সকাল ১০টায় আল্লামা আহমদ শফির সভাপতিত্বে দারুল উলুম মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বুধবার শুরা কমিটি সভায় ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক ও হাইয়াতুল উলয়া কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম ও বেফাক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, জামেয়া নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক মাওলানা সলিম উল্লাহ এবং হাটহাজারীর শিকারপুরের বাথুয়ার মাওলানা ওমর ফারুক চৌধুরী।
এর আগে গত ৭ জুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। আটদিন পর সোমবার (১৫ জুন) বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। এরপরই তিনি দারুল উলুম মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক আহ্বান করেন। মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত হয় এই শুরা বৈঠকে। মাদ্রাসার মোহতামিম (মহাপরিচালক) নির্বাচনের ভারও এই শুরা কমিটির ওপরই।
এদিকে শতবর্ষী প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। দীর্ঘদিন ধরেই আল্লামা শফী প্রায়ই অসুস্থতার মধ্যে পড়ায় মাদ্রাসার কাজে গতি আনতে মোহতামিম (মহাপরিচালক) নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অনেকের অভিমত ছিল।
তবে গত মাসের মাঝামাঝিতে মোহতামিম (মহাপরিচালক) নির্বাচন প্রশ্নে হঠাৎ আল্লামা শফী ও মাদ্রাসার মুঈনে মোহতামিম (সহকারী পরিচালক) আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আল্লামা শফীর অসুস্থতার কারণে একটি পক্ষ মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ঘোষণা করলে এই বিরোধের সূত্রপাত হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ মে আল্লামা শাহ আহমদ শফী এক ভিডিও বার্তায় এসে জানান— ‘আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে এই মাদ্রাসার জন্য কী করেছি না করেছি, সব মানুষের জানা আছে। ভিত্তিহীন কিছু কিছু অপবাদ দেয়া হচ্ছে। সারাটা জীবন মাদ্রাসার জন্য নিজের জীবনকে কোরবান করে দিয়েছি। কাউকে নায়েবে মোহতামিম অথবা জিম্মাদার করে দিইনি। যা কিছু করার মাদ্রাসার জন্য সব মজলিসে শূরা করবে।’
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, বুধবার সকালের বৈঠকেই নির্ধারিত হওয়ার কথা হেফাজতে ইসলামীর আমীর ও দারুল উলুম মাদ্রাসার বর্তমান মোহতামিম (মহাপরিচালক) আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরীর নাম। উত্তরসূরী কে হবেন— তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল মাদ্রাসার ভেতরে ও বাইরে। আবার এ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে সরকারের শীর্ষমহলেও। কারণ যিনিই উত্তরসূরী হবেন, তিনিই হবেন হেফাজতে ইসলামীর আমীরও।
এরই মধ্যে শুরা কমিটি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর হেফাজতে ইসলামের আমীর হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিল বুধবারের সভায়। তাকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে তাতে বসানো হল মাওলানা শেখ আহমদকে। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচিত এই ইসলামী সংগঠনটির আমীর পদে আল্লামা শাহ আহমদ শফির অবর্তমানে স্থলাভিষিক্ত হবেন মাওলানা শেখ আহমদ।