মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মাঝে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
এসময় তিনি বলেন, সীমান্তে আর একটি লাশও চাই না বাংলাদেশ। একই সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের মাঝে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বসবাসকারীদের প্রতি আহবান জানান বিজিবি প্রধান।
আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২ টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজিবির মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষে বিভিন্ন সময় গোলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। যেহেতু চলমান সংঘাত সে হিসেবে এটি কখন থামছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে গোলাগুলির কমে এসেছে জানিয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি কমে এসেছে। পরিস্থিতি এখনো বিজিবির কন্ট্রোলে রয়েছে। কোন সীমন্তই অরক্ষিত নেয়। আড়াই শ কিলোমিটারের বেশি সীমান্তের সবখানেই বিজিবি তৎপর রয়েছে।
কোন ধরণের অনুপ্রবেশকারীকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী, সেনা ও শুল্ক কর্মকর্তাসহ ২৬৪ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারাও ফেরত যাবার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের দ্রুত সে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবি’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- শুধু সে দেশের সীমান্তরক্ষী নয় কিছু রোহিঙ্গা উৎশৃঙ্খল যুবককে আটক করা হয়েছে। তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশকালে পুশব্যাক করা হয়েছে টেকনাফ পয়েন্ট থেকে।
পরিদর্শনকালীন বিজিবি মহাপরিচালকের সাথে বিজিবি সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ বিজিবি’র অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে বিজিবি মহাপরিচালক মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), মায়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সকল সদস্যদের খোঁজ খবর নেন এবং আহত অবস্থায় আগত ও হাসপাতালে চিকিৎসারত বিজিপি সদস্যদের সরেজমিনে দেখতে যান।