সীমান্ত সুরক্ষায় রামগড়ের তানাক্কাপাড়া বিস্তীর্ণ সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে

purabi burmese market

বাংলাদেশের একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরুপ লীলাভুমি। এছাড়াও বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, আঁকাবাঁকা পাহাড়,পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণাধারা। দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে লাঠি সদৃশ হাতে ভর করে পর্যটকের বিজয় চিহ্ন প্রদর্শিত আঙ্গুলের ইশারা পাহাড়ে নতুন নয়। এসব রুপ ও বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যের বিশাল একটি জায়গা দখল করে আছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা।

কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে এখানকার মানুষ সমতলের তুলনায় অনেকটা অনগ্রসর এবং পশ্চাৎপদ। দীর্ঘ দিনের বিদ্যমান ভূমি সমস্যা, আশানুরুপ বিনিয়োগের অভাব,আঞ্চলিক রাজনৈতিক সমস্যা ও সর্বোপরি দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এ অঞ্চলের কাঙ্খিত অগ্রগতির মুল প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য এলাকার অনগ্রসরতার বিষয়টি নিয়ে এখানকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের অভিপ্রায়ে পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশের অপরাপর এলাকার উন্নয়নের সমান্তরালে নিয়ে আসার জন্য সরকার যুগোপযোগী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাছাড়া একটি দেশের সীমান্ত পথ যত প্রতিরক্ষায় থাকবে দেশটি তত বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের নিরাপত্তা তত জোরদার হবে।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধন করা হলেও বিপুল পরিমাণ সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত রয়েছে সেজন্য অত্রাঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবার দরুন দেশের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় এনে অবাধে চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ মানব পাচারের মত যুব সমাজকর ধ্বংসাত্মক কাজ করে রেহাই পেতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সরকার সীমান্তে সড়ক নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় রামগড় তানাক্কাপাড়া সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেছে সেনাবাহীনির দায়িত্বপ্রাপ্ত ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) কনস্ট্রাকশন বিভাগ।

dhaka tribune ad2

তবে দুর্গম পাহাড়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পদে পদে প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর উপর রয়েছে এক শ্রেণির লোকদের অপতৎপরতা। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের জীবনের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে রেখে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রামগড়ের পিলাকছড়া এলাকায় রামগড় তানাক্কাপাড়া সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রকল্পের উপ-সাইট ইনচার্জ ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)’র সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

তাছাড়া গত ৭ নভেম্বর নির্মাণাধীন সড়কটির রামগড়-তানাক্কাপাড়া(মাটিরাঙ্গা) সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের মাঝে ক্ষতিপূরণের নগদ অর্থ প্রদান করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।

গভীর জঙ্গল পরিষ্কার পূর্বক পার্বত্য আঁকাবাঁকা পাহাড়ে বুক ছিড়ে যেখানে মানুষের আনাগোনা নেই। চারদিক পাখির ডাক বৈ আর কিছু শোনা যায় না। শুধু পাহাড় আর ঝোঁপ ঝাড়ে মোড়ানো প্রকৃতির পাশ হয়ে ভারত – বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার আইনের দুরত্ব বজায় রেখে সড়কটি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।

বর্তমানে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। রাস্তাটি রামগড় থেকে শুরু হয়ে লক্ষীছড়া ভায়া হয়ে মাটিরাঙ্গার তানাক্কাপাড়া পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে।

৪০ বিজিবি সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫৬.০৫ কিলোমিটার দুরত্বের সড়কটির বর্তমান নির্মান কাজ চলমান ও দৃশ্যমান রয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে সড়ক নির্মানের সময় সীমান্তবর্তী এলাকায় জিরো পয়েন্টে ভারতের ৯৬ বিএসএফ মাগ্রুম ক্যাম্প কমান্ডার ইন্সপেক্টর মুনেষ শিং এর নেতৃত্বে নির্মান কাজে বাধা প্রদান করা হয়েছিল।

পরে দুই দেশের ১ম দফা পতাকা বৈঠক হয়,বৈঠকে ১৪৪ গজের মধ্যে কোন ধরণের রাস্তা বা স্থায়ীভাবে কোন কিছু নির্মান না করার জন্য বলা হয়। বৈঠক শেষে সীমান্ত আইন অনুসরণপূর্বক বর্তমানে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়। রাস্তা নির্মাণে স্থানীয়দের সহযোগীতা বা আগ্রহ থাকলেও আরেক শ্রেণির লোকেরা তাতে সঙ্গোপনে বাধা প্রদান করে। সকল বাধাকে উপেক্ষা করে জনস্বার্থ বিবেচনা করে রাস্তাটির নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে।

রাস্তাটি নির্মাণের ফলে সড়ক পথে ৩/৪ ঘন্টার যাতায়াত ৩০/৪০ মিনিটে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সড়কটি নির্মানের ফলে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। তাছাড়া সড়কটি নির্মাণের ফলে পাবর্ত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা,স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা ও কৃষিজাত পণ্যেও বিপণন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করবে বলে সচেতন মহল আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা জানান,যে এলাকার যোগাযোগ যত উন্নত হবে সে অঞ্চল তত উন্নত হবে। রাস্তাটির নির্মাণের ফলে তাইন্দং থেকে সরাসরি রামগড়ে যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে এতে করে লোকজনের ভোগান্তি কমে তাদের সাথে শহরের সংযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং অত্র এলাকার লেকজনের উন্নত চিকিৎসা সহ শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ হবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়ন সীমান্ত ঘেঁষা তাই এ রাস্তাটি হবার ফলে এতদঅঞ্চলের সাথে অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। আশাকরি সকল বাধা পেরিয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে পাশাপাশি জনগণ এর ব্যাপক সুফল ভোগ করবে।

৪০ বিজিবির পলাশপুর জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সৈয়দ সালাহউদ্দিন নয়ন পিএসসি বলেন, সড়কটি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে সড়ক নির্মাণে ৪০ বিজিবি সর্বাত্বক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হবে।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।