১১ বছর ধরে পদ দখল অন্য চিকিৎসকের : চক্ষু চিকিৎসা বঞ্চিত রোগীরা
বান্দরবান সদর হাসপাতাল
চক্ষু চিকিৎসকের পদে অন্য রোগের চিকিৎসক কর্মরত থাকায় দীর্ঘ ১১ বছরেরও অধিক সময় ধরে চক্ষু চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে বান্দরবান সদর হাসপাতালে। চক্ষু চিকিৎসকের পদ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক না থাকায় প্রতি মাসে প্রায় ৬০০ জনেরও অধিক রোগী বেসরকারি ভাবে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে জেলার বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে। ফলে চিকিৎসা নিতে অতিরিক্ত অর্থ খরচের পাশাপাশি পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলার রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিসহ সদর উপজেলার স্থানীয়রা চিকিৎসা সেবা নিতে সদর হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারনে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে জেলার বাসিন্দাদের ভরসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চক্ষু শিবির ও চট্টগ্রামের সরকারী- বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপর।
চক্ষু চিকিৎসা নিতে থানচি থেকে আসা রাংলাই ম্রো জানান, চোখের চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে আসছি, কিন্তু শুনলাম চক্ষু চিকিৎসক নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের মতো গরীব মানুষ ফি দিয়ে কিভাবে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিবো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পরিচালিত সিচুযশেন এনালাইসিস অফ ভিশন-২০২০ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১.৫ শতাংশ অন্ধ এবং ২১ শতাংশের বেশি মানুষ স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ শিশু বর্তমানে চোখের সমস্যায় ভুগছে। এতে ধারণা করা হয় বান্দরবানেও চোখের সমস্যায় ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।
স্থানীয় চক্ষু রোগী মো.আনিছুর রহমান জানান, সদর হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলি চক্ষু হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করাতে হয়, আর কিছু দিন পর পর ফলোআপ করতে যেতে হয় সেই সুদূর চট্টগ্রামে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয় সদর হাসপাতালকে। দীর্ঘ এক যুগেরও আগে ডাক্তার সরোজ কান্তি নন্দী থাকা কালিন হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো। পরে ২০১১ সালের মে মাসে চক্ষু চিকিৎসক না হয়েও এই পদের বিপরীতে যোগদান করেন ডাক্তার অজয় কিশোর বড়ুয়া। সে সময় থেকে অদ্যাবধি প্রায় ১১ বছর ধরে কোন চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে সদর হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসা সেবা।
আরো জানা যায়, অজয় কিশোর বড়ুয়া ২০০৩ সালের ৫ জুন থেকে ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার থানচি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর হতে ২০১০ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১১ সালের ২৫ মে বান্দরবান সদর হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক পদের বিপরীতে যোগদান করার পর এখনও কর্মরত আছেন।
এই বিষয়ে ডাক্তার অজয় কিশোর বড়ুয়া’র সাংবাদিকদের বলেন, উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে ২০১১ সালে যোগদান করার পর থেকে সদর হাসপাতালে। চোখের চিকিৎসা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে বলেন, ডিজি অফিস ভালো বলতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চোখের চিকিৎসার জন্য জেলায় তেমন চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় ২০২১ সালে জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেসরকারি উদ্দ্যোগে গড়ে উঠে বান্দরবান চক্ষু হাসপাতাল। সেখানে দৈনিক গড়ে ১৫ জন চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
এবিষয়ে বান্দরবানের সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, হাসপাতালে তাকে (ডাক্তার অজয় কিশোর বড়ুয়া) দিয়ে চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া না গেলেও জটিল কিছু সার্জিকেল অপারেশন করা হয়। এছাড়া চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষে জানিয়েছি, খুব দ্রুত সমস্যাটির সমাধান করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ অক্টোবর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে গরিব রোগী যেন কোন মতে জেলার বাহিরে না যায় এবং হাসপাতালের মানোন্নয়নে কি কি করা যায় সেটা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।