৩ বছর আগে বিল উত্তোলণ : ৫ বছরেও শেষ হয়নি রুমায় বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ !

NewsDetails_01

নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রাখা ‘সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রাখা ‘সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর মধ্যে যোজসাজশে কাজটি সমাপ্ত দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল উত্তোলণ করে নিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর কিন্তু বিদ্যালয়টির কাজ শেষ হয়নি এখনো, কখন শেষ হবে তাও জানেনা কেউ। বিদ্যালয়টি হচ্ছে রুমার সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩অর্থ সালে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিডিপি-৩)এর আওতায় ৫৬লক্ষ টাকার ব্যয়ে ‘সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কোনো প্রকার সমাপ্ত না করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে ঠিকাদার তিন কিস্তিতে চুড়ান্ত বিল উত্তোলণ করেন। কাজ শতভাগ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয়েছে, এমন প্রতিবেদন সহকারে বিল প্রস্তুত করেন অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী। বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান অনুমোদিত স্বাক্ষরের পর ঠিকাদার টাকা উত্তোলণ করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর চুড়ান্ত বিল দেয়ার নিয়ম-নীতি থাকা সত্ত্বে ও এখানে তা মানা হয়নি।
গালেঙ্গ্যা ইউপি‘র চেয়ারম্যান শৈউসাই মারমা জানান, বিদ্যালয়টিকে যে কেউ দেখলে নতুন বলে মনে হবেনা, সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ থেকে পানি চুষে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণের অনিয়ম ও দূর্নীতি আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি বিদায়ী ইউএনও‘কে বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলাম। তখন ইউএনও এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে পাঠান এবং বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রদানে স্থগিত করা হয়েছিল কিন্ত পরে জানা গেল, চুড়ান্ত বিল হয়ে গেছে।
আরো জানা গেছে, চুড়ান্ত বিল নেয়ার পর একদিকে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ অসমাপ্ত বিদ্যালয় নির্মাণ কাজটি ফেলে রেখে দেয়, অন্যদিকে এলজিইডি‘র উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ প্রকৌশলীদ্বয় গড়িমসি করে নির্মাণ কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেনি। এতে সরকারের ৫৬ লক্ষ টাকার ব্যয়ে নির্মানাধীন বিদ্যালয়টি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মোন মোহন দাশ অন্যত্র বদলী হয়ে ইতোমধ্যে চাকরির অবসরে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহন মহন দাশ বলেন, নির্মাণ কাজটি কোন বিদ্যালয় ও কোথায় ছিল, তা মনে করতে পারছিনা। ওই সময়ে দায়িত্ব থাকা উপসহকারি প্রকৌশলীর কাছে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে তিনি জানান।

NewsDetails_03

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অসমাপ্ত বিদ্যালয়টি ছাদ থেকে পানি চুষে পড়ে পাঠদান কার্যক্রম প্রায় সময় বন্ধ রাখা হয়। কবে নাগাদ শেষ হবে বা আদৌ করা হবে কিনা, তা কেউ স্পষ্ট বলতে পারেন না। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অভিবাবকরা ।
উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা বলেন, ঠিকাদারের এক লক্ষ টাকার মতো জামানত জমা আছে সেই টাকা দিয়ে বাকী কাজগুলো করিয়ে নিতে মাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শেষ হবে তিনি জানাতে পারেননি।

এলজিইডি উপসহকারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল হোসেন বলেন,সেপ্রু পাড়া সরকারি বিদ্যালয়টি নির্মাণ করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মার্মা এন্টারপ্রাইজ। বর্তমানে ওই লাইসেন্স দিয়ে গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নে আরেকটি নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ চলছে। এ ঠিকাদারের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করানোর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জেলার এলজিইডি‘র নির্বাহী মোহাম্মদ শরীফ হোসেন জানান, উপজেলায় উপ সহকারি মোহাম্মদ রুবিউলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

আরও পড়ুন