আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়মের পাহাড়

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
বান্দরবানের আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আর শিক্ষক কর্মচারীরা এক দপ্তরীর নিকট জিম্মি হয়ে পড়ার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যেন অনিয়ম এই নিয়মে পরিনত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দপ্তরীর অপকর্মের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের হাত-পা কেটে ফেলার হুমকিও দেবার কারনে অবশেষে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষকরা থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃদুল কান্তি তালুকদার ও দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজশে ‘বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন’ নামে চলতি শিক্ষাবর্ষে একটি খাত সৃষ্টি করে। এ খাতের আওতায় বিদ্যালয়ের ৩৬০ জন শিক্ষার্থী থেকে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা হারে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থ আদায় করে আত্মসাত করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা হারে ছাড়পত্র ফি আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা করা হচ্ছেনা, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৪ সালের ৬ জুলাই জারী করা পরিপত্রবিরোধী।
আরো জানা গেছে, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ব্যয়ে শিক্ষকদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি থাকার কথা কিন্তু কমিটি ছাড়াই বিদ্যালয়ের আয়ের অর্থ আত্মসাত করছেন প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী সিন্ডিকেট। নিরুপায় হয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক -কর্মচারীরা সুনির্দ্ধিষ্ট ১২টি বিষয়ে তদন্ত দাবী করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বিদ্যালয়ের বৃক্ষনিধন, কোচিং বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাত ও পুকুরের লীজ জালিয়তিসহ নানান আর্থিক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃদুল কান্তি তালুকদার বলেন, শিক্ষকরা আমাকে তোয়াক্কা করছেন না, আমার বিরুদ্ধে তারা অহেতুক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অভিযোগ তুলছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলমের হুমকিতে আমরা তটস্থ, দুই দশকের বেশি সময় তিনি একই কর্মস্থলে থাকায় সে কাউকে পরোয়া করছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে স্বপরিবারে থাকতে দিয়েছেন, সে গৃহপালিত পশু পালন করার কারনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে দপ্তরী জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময় গালিগালাজ করে ‘চাকুরী কেমনে কর’ বলে হুমকী দিয়ে থাকেন। ফলে একজন শিক্ষক থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন।
শিক্ষকরা লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, বিদ্যালয়ের গেইটের কাছে অন্বেষা নামে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন দপ্তরী জাহাঙ্গীর। তাকে দিয়েই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনায়ন করেন, প্রশ্নপত্রও গচ্ছিত রাখা হয় দপ্তরীর কাছেই। পরীক্ষা চলার সময় দপ্তরীর নিকট হতেই প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষকদের পরীক্ষার হলে যেতে হয়। বিদ্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে এ ধরণের ‘ক্ষমতা’ প্রদানকে নৈতিকতা বিবর্জিত, বেআইনী ও শিক্ষক সমাজকে হেয় ও অপমান করার শামিল দাবী করেছেন।
শিক্ষকরা বলেন, বিদ্যালয়ে নামে থাকা বিশাল একটি পুকুর বছরের পর বছর ধরে দপ্তরী জাহাঙ্গীর ভোগ করছেন। শিক্ষক ও কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়া এবং প্রকাশ্য নিলাম না দিয়ে দপ্তরীকে মাছ চাষের অনুমতি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেন, পুকুরটিতে আতাউল নামে এক ব্যক্তির সাথে যৌথভাবে মাছ চাষ করেন জাহাঙ্গীর। বৈধ উপায়ে পুকুর নিলাম না দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। স্থানীয় বাজারের কাপড়ের দোকানদার আতাউল বলেন, ‘আমি পুকুরটিতে কিছু মাছ ফেলেছি, তবে এখনো পর্যন্ত কাগজে পত্রে নিলাম নেইনি’।
সহকারি শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম মনছুরী বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী মিলে বিদ্যালয়ের বড় ও মাঝারী সাইজের ৮টি বৃক্ষ নিধন করেছেন, যার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবে। এ বৃক্ষ নিধণের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সরকারি অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
আরো জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের মর্জিমাফিক বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন, নিয়মের ধার ধারেন না। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংস্কারের নামে বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করছেন। শিক্ষক কিংবা কমিটির সাথে আলোচনা না করেই বিদ্যালয়ের বেসরকারি তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন করে কথিত ‘কেন্টিন’ নির্মাণ করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্র পেয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন