এন মোহাম্মদ প্লাস্টিকের মেশিনের ভেতর বান্দরবানের শৈহ্লাচিংয়ের পাঁচ আঙ্গুল

NewsDetails_01

পরিবারের অভাব ঘোচাতে মাত্র সাতদিন আগে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কারখানায় হেলপার পদে যোগ দেন বান্দরবানের শৈ হ্লা চিং মারমা। কিন্তু কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলের কোনটিই নেই এখন। মেশিন চালাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় শ্রমিকদের শরীরে যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা, তা না দেওয়ায় কারখানার প্লাস্টিকের মেশিনে ভেতরে রয়ে গেছে শৈহ্লাচিংয়ের হাতের আঙ্গুলগুলো।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়ে অনিশ্চয়তায় আটকে পড়েছে তার জীবনের আগামী দিনগুলো। এমনই অভাব তার পরিবারে, গাড়ি ভাড়ার অভাবে পিতা-মাতা বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে তাকে দেখতে আসতে পারেননি।

বান্দরবান সদর উপজেলার উজানি পাড়ার থুই খই প্রুর ছেলে শৈ হ্লা চিং মারমা (২১) গত ২ সেপ্টেম্বর মুরাদপুর এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান। পরিবারের অভাব ঘোচাতে রাত ৯টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টার ডিউটি মেনে নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে যারা কারখানায় যোগ দেন তাদের কাজ শেখানোর জন্য হেলপারের কাজ দেওয়া হয়। শৈ হ্লা চিং মারমা প্যাকেজিং ও মালামাল এদিক-সেদিক নেওয়ার কাজ করেন।

তাকে নিয়োগের সময় রাত ৯টা থেকে সকাল ৯টা ডিউটি থাকলেও হঠাৎ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টায় ডিউটি দেওয়া হয়। সুপারভাইজার তাকে মেশিনে কাজ করতে বললে সে নতুন হিসেবে ভয় পেলেও চাকরি বাঁচাতে মেশিনে কাজ করতে যায়। স্বাভাবিকভাবে যাদের দুই থেকে তিন বছরে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদেরকে মেশিনে কাজ করতে দেওয়া হয়। অথচ শৈ হ্লা চিং মারমাকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এমন ঝুকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

NewsDetails_03

আনাড়ি হাতে বালতি তৈরির মেশিনে কাজ করার সময় হঠাৎ তার হাত আটকে যায়। প্রচন্ড জোরে মেশিনের চাপে মুহুর্তে শৈ হ্লা চিং মারমার পাঁচ আঙ্গুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সহকর্মীরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২৬ নং অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

তার দুর্ঘটনার খবর শুনে বান্দরবান উজানি পাড়ার কাউন্সিলর থুই চিং প্রু এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক সাথে ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান,পাঁচ আঙ্গুল নয় দুই আঙ্গুলের সামান্য অংশ কাটা গিয়েছে। সুস্থ হলে তাকে কারখানার সিকিউরিটির চাকরি দেওয়া হবে।

হাসপাতালের শয্যায় শৈ হ্লা চিং-এর সাথে আলাপকালে জানা যায়, পরিবারের অভাব ঘোচাতে বান্দরবান উজানি পাড়ার কাউন্সিলর থুই চিং প্রুর মাধ্যমে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি তিনি নেন। আশা ছিল, চাকরি করে পারিবারিক অভাব ঘুচিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তা আর হলো না। উল্টো কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে নিজের হাতের পাঁচ আঙ্গুল হারিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন আর অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কান্নাকাটি করছেন।

এ বিষয়ে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর ‘বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিটিংয়ে’ আছেন, ‘পরে কথা বলবো’ জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। প্রতিষ্ঠানটির জিএম সৈয়দ মুহাম্মদ ফরহাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার সাড়া মেলেনি।

আরও পড়ুন