এমডিকে খাওয়ানো হলো না ‘সুপেয় পানির শরবত’

NewsDetails_01

অফিস কার্যালয়ে না থাকায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ‘সুপেয় পানির শরবত’ খাওয়ানো সম্ভব হয়নি রাজধানীর জুরাইনবাসীর। ‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’, ওয়াসার এমডির এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে পুরান ঢাকার জুরাইনের বাসিন্দারা তাকে সুপেয় পানির শরবত খাওয়ানোর এমন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) কাওরানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে সুপেয় পানির শরবত নিয়ে এমডিকে খাওয়াতে আসেন জুরাইনবাসী।

এদিকে ওয়াসা ভবনে প্রবেশের প্রথমেই বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ঢাকা ওয়াসা ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন জুরাইন এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন। তারা ওয়াসার পানিতে লেবু ও চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন এমডির জন্য। একপর্যায়ে তাদের ওয়াসা ভবনে ঢোকার অনুমতি মেলে। ওয়াসার এমডি সেসময় উপস্থিত না থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম সহিদ উদ্দিন।

পরিচালকের রুমে জুরাইনবাসী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মিজানুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা আশ্বাস নেওয়ার নিশ্চয়তা দেন সহিদ উদ্দিন। একপর্যায়ে মিজানুর রহমানের নিয়ে আসা শরবত পানের আহ্বান জানালে সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজ শরবত খাবো না। ওই এলাকার পানির সমস্যার সমাধান করে সেই পানি দিয়ে শরবত খাবো।’

সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটি ওয়াসার পানি খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে তার দায়-দায়িত্ব নেবে ওয়াসা। ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়; ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বক্তব্যকে সমর্থন করে এমনটাই জানান ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম সহিদ উদ্দিন।’

সহিদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘এমডির বক্তব্য শতভাগ সঠিক। কারণ আমাদের যে গভীর নলকূপ থেকে পানি নিই সেই পানি শতভাগ নিরাপদ। এছাড়া পানি উৎপন্নস্থল রিজার্ভে দেওয়ার আগে ও পরে তিন দফা পরীক্ষা করা হয়। পানিতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ক্লোরিন দিয়ে তা বিশুদ্ধ করা হয়। আমি নিজেও আমার বাসায় ওয়াসার পানি সরাসরি পান করি।’

NewsDetails_03

ওয়াসার এমডির বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়ে কেউ ওয়াসার পানি পান করে অসুস্থ হলে তার দায়ভার কে নেবে; মিজানুর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমি নেবো, ওয়াসা নেবে।’

এদিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওয়াসার এমডির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলোম। আমরা তার পদত্যাগ চাই। যাই হোক, ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) সহিদ আমাদের অভিযোগ শুনেছেন। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে জুরাইনবাসীসহ রাজধানীবাসীর সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়- গত ২০ এপ্রিল সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় পুরান ঢাকার জুরাইনবাসী। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় তারা কাওরানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে ওয়াসার পানির শরবত বানিয়ে এমডিকে খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করেন।

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।

এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে শনিবার (২০ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এছাড়া টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন