কর্ণফুলী পেপার মিল : ঈদেও শত শত শ্রমিক কর্মচারীর বেতন নেই

NewsDetails_01

কর্ণফুলী পেপার মিল
পবিত্র রমজানের ঈদের আগমুহুর্তে শত শত শ্রমিক কর্মচারীর কোন বকেয়া বেতন ভাতা এবং অবসরপ্রাপ্তদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করছে না একমাত্র রাষ্ট্রয়ত্ত কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) কর্তৃপক্ষ।
মাস শেষে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা, আবার চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে যাওয়ার পর বছরের পর বছর ঘুরিয়ে নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় কর্মরত এবং অবসরে যাওয়া শত শত শ্রমিক কর্মচারী অবর্নণীয় দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর দিন পার করছে।
কর্ণফুলী পেপার মিলের হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত এই কারখানা থেকে অবসরে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। মিলের শ্রমিকদের কোন এলপিআর-এর (অবসরকালীন ছুটি) সুযোগ না থাকায় শ্রমিকরা অবসরে যাওয়ার সাথে সাথে এবং কর্মচারীরা এলপিআর এ যাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারীরা অবসরে গিয়ে মাসের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। অপরদিকে কর্মচারী কর্মকর্তাদের এলপিআর সময় পার হওয়ার পর তাদের পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা পরিশোধ করা হচ্ছে না।
মিলের আর্থিক সংকটের কারণে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা তিন মাস ধরে নিয়মিত বেতন ভাতাও পাচ্ছেন না। শ্রমিক কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধের বাহানা দিয়ে ঘুরানো হলেও ঈদের আগে কিছু টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঈদ সন্নিকটে চলে আসা সত্ত্বেও ও শত শত শ্রমিকের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। এতে কর্ণফুলী পেপার মিলের শ্রমিকদের ঈদ আনন্দতো দূরে, দুবেলা খাবার সংস্থানেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা জানান, অবসরে যাওয়ার পর অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য আন্দোলনও করেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত রমজান ও কোরবানির ঈদের সময় আন্দোলনের পর শ্রমিক কর্মচারীদের সামান্য কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মূলত ২০১৩ সাল থেকে সরকারি মালিকানাধীন কাগজ কলটির অবসরে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরা এই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। কেপিএমের কাছে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি বাবদ মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কবে শ্রমিক-কর্মচারীরা এই টাকা ফেরত পাবেন সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিচ্ছেন না কেপিএম কর্তৃপক্ষ। বরং আর্থিক সংকটের অজুহাত দিয়ে দিনের পর দিন এই প্রবীণ লোকগুলোকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কেপিএম সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজকলটি দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানে আছে। কাঁচামাল সংকট, নানা অব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক দুরাবস্থার কারণে উৎপাদনক্ষমতার ২০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারছে না কারখানাটি। কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১১০ মেট্রিকটন হলেও এই কারখানা এখন দৈনিক কাগজ উৎপাদন ১০ থেকে ২০ মেট্রিকটন। লোকসান সামাল দিতে কারখানার প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারীকে বিসিআইসি’র বিভিন্ন কারখানায় গণবদলি করা হয়েছে ।
এ ব্যাপারে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল কাদের জানান, অর্থ সংকটের কারণে অবসরে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিসিআইসি সদর দপ্তরে চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করে সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ সঙ্কটের সুরাহা হবে এবং ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে কিনা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আরও পড়ুন