কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসের আজ ৩ বছর : এখনোও ঝুঁকিতে বসবাস

NewsDetails_01

২০১৭ সালের ১৩ জুন। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইবাসীর জন্য দিনটি ছিল এক বিভীষিকাময় দিন। এর আগের দিন (১২ জুন) মধ্যরাত হতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। টানা বর্ষনে তখন ঘরবন্দি প্রায়ই মানুষ। অতিবৃষ্টিতে সেইদিন কাপ্তাইয়ের সকল সড়ক পথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল।

১৩ জুন সকালে কাপ্তাইবাসী শুনলো ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের কথা। বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসতে লাগলো মৃত্যুর কথা। সেইদিন সকালে প্রথম দু:সংবাদটি আসে ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি হতে। ভয়াবহ পাহাড় ধসে সেইদিন ঐ এলাকার বসবাসরত নুরনবীসহ তার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশু পুত্র ঘটনাস্থলে মারা যায়।

ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসসহ ঐ এলাকায় ছুটে যান তৎসময়ের কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম এবং ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী। এরপর একে একে ওয়াগ্গার মুরালীপাড়া, রাইখালির কারিগর পাড়া এবং চিৎমরম হতে পাহাড়ধস ও মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। সেইদিনের পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে প্রান হারায় সর্বমোট ১৮ জন। পাহাড়ী ঢ়লে তলিয়ে যায় শত শত একর সবজি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ী। এখনোও সেই দিনের কথা কাপ্তাইয়ে জনগন মনে করে শিহরিত হয়ে উঠে।

আজ(১৩ জুন,২০২০) কাপ্তাইয়ের পাহাড় ধসের ৩ বছর হলো। এখনো কাপ্তাইয়ের অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। এইছাড়া ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়িসহ দূর্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অনেক পরিবার। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদেরকে প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসা হলেও এই সব পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা যায় নাই।

NewsDetails_03

এই বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সর্তক করে আসছে। অতিবৃষ্টি হলে আমরা এদেরকে নিকটস্থ স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি, যাতে প্রানহানী না ঘটে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে আমরা সরকারের নিকট কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং চিৎমরম ইউনিয়নে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির জন্য লিখিত আকারে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০ টির অধিক পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে।

৪ নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলে আমরা অজানা আতংকে থাকি, বিশেষ করে তার ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার।

তিনি জানান, অতিবৃষ্টি হলে আমরা তাদেরকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে এনে আশ্রয় দিই এবং তাদের খাবার পরিবেশন করে থাকি। কিন্ত এটা কোন স্থায়ী সমাধান না, তাই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে কোন নিরাপদ জায়গায় পূর্নবাসন করার জন্য সরকারের নিকট জোড় দাবী জানান।

প্রতিবছর বর্ষা আসলে অতিবৃষ্টি হলে কাপ্তাইয়ে অনেক জায়গায় পাহাড় ধস হয়, প্রানহানী ঘটে, ক্ষতি হয় সম্পদের। ঘটনার পর ছুটে আসে মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। সকলেই আশ্বাস দেয় এদের পূর্নবাসন এর। কিন্ত বর্ষা শেষ হলেই সেইসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায় না, তাই কাপ্তাইয়ের সর্বস্বরের জনগনের দাবী, এই সব পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা হউক যেনো আর কারোও মায়ের বুক খালি না হয়।

আরও পড়ুন