কোথায় গেলে পাবো তাদের ? রুমায় সন্তান হারা দুই মায়ের আক্ষেপ !

NewsDetails_01

চোখের জল শেষ করতে পারি না, আমার মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে গত পাঁচ-ছয় মাস চোখ থেকে অনবরত পানি ফেলছি। নিজের কান্না থামিয়ে নিতে চাই। কোথায় গেলে ভাল হবে, সেটা খুঁজছি। এসব কষ্ট ও শোকের ব্যথা কারোর কাছে দেখতে ও শুনতে চাই না আর। এসব কথাগুলো বলেছেন কাইতন ম্রো (৪০)। তার বাড়ি বান্দরবানের রুমায় গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের দুর্গম আবু পাড়া।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চিম্বুক রোডে পড়ুয়াই পাড়ায় গেলে ক্যাং এর পাশে একটি গাছে শিকড়ে বসে দুইজন নারীকে এ প্রতিবেদক দেখতে পান। দু‘জনে কি যেন কথা বলে চোখের জল মুছতে থাকে। এগিয়ে যায়-সামনে, কথা বলার অপারগতা ইঙ্গিত দেখায়। তবে চোখের জল যেন টলমল করছিল দু‘জনের। তাদের ডানে ২০ফুট দুরে পাঁচজনের কিশোরী দল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করে বাংলা ও ম্রো ভাষায় কথা বলছিল। অনুবাদক হিসেবে কিশোরীদের সহযোগিতায় ওই দুই নারীর সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।
কাইতনে সাথে আরেক জনের নাম কাইপো ম্রো-(৪১)। দুইজনের একটি পাড়ার বাসিন্দা। তারা জানায়, কাইতন ও কাইপো ম্রো ‘র মধ্যে সম্পর্কে কোনো আত্মীয়তা হয় না, তবে পাড়ার প্রতিবেশি। পাঁচ মাস আগে কাইতনের কনিষ্ঠ মেয়ে জ্বরে মারা যায়। মায়ের ভাষ্যমতে, সামান্য জ্বর ছিল, কিছুটা শ্বাস কষ্ট ও মাঝে মধ্যে বমির ভাব দেখায়, খেতেও চাইত না। এভাবে তিন-চার দিন। একদিন বিকালে কাজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরে দেখি মেয়ে চোখ ঝিমিয়ে আছে। ছোট ছেলে মাকে জানায়, সারাদিন কিছু খাইতে চাইনি মেয়ে। ওই রাতে মারা যায় পাঁচ বছর বয়সি কাইতনের প্রাণের সন্তান।
ঠিক এক মাস পার হতে নাহতে-ই প্রতিবেশি কাইপো ম্রো ‘‘র সাত বছর বয়সি ছেলে সন্তান প্রাণ হারায়। মা জানায়, একদিন মাত্র সামান্য জ্বর ছিল। আগের দিন জ্বর হলেও খেলা ও খাওয়া ঠিক ছিল। হঠাৎ চলে যাবে মা একদম ভাবতে পারেনি। কাইপো ম্রো বলেন, ছেলে ত নথাই, বাড়ি অমি নুওয়া বাক নখাই-একন(ছেলে নেই, বাড়িতে আমি নতুন ভাত খায় না)।
তারপর থেকে শোকের সঙ্গী হয়ে ওঠে কাইতন ও কাইপো‘র মধ্যে। সন্তান হারা এ দুই মা‘র সন্তান খোঁজে এক সাথে গত কয়েক মাস ধরে শোকের বেদনা মুছিয়ে দিতে বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরে বেড়ান এ পাড়া থেকে ওই পাড়ায়। ওইদিনও উদ্দেশ্য বিহীনভাবে সকাল থেকেই পড়ুয়াই পাড়ায় এসে হাজির হয়েছিল তারা। এমন কথা জানালেন তারা। কাইতন জানায়, মেয়ের জন্য কিছু ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করতে চায়। তবে তা করতেও সে সামর্থ্য নেই।
কিন্তু কোথাও তাদের শোকের বেদনা মুছতে না পেরে শোক আর মনের আঘাত, আর যন্ত্রণার ক্ষত নিয়ে যেন পথচলছে সন্তান হারা দুই মা। আর কতদিন এভাবে তাদের এ শোকের জীবন নিয়ে পথ চলতে হবে?
এসব কথোকথনে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে ১০ম শ্রেণি লেংপুং ম্রো ও নবম শ্রেণি রুনরিং ম্রোসহ ওই ছাত্রী পাঁচজনের বাড়ি চিম্বুক রোডে এম্পু পাড়া। এরা সবাই বান্দরবান সদরে পড়ালেখা করছে বলে তারা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন