খাগড়াছড়িতে চাওয়া-পাওয়ার প্রশ্নে একাট্টা উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতারা

NewsDetails_01

বিগত পৌর নির্বাচনের রেষারেষি থেকে শুরু হওয়া বিরোধ কোনভাবেই থামছে না। আওয়ামীলীগের অর্ন্তকলহ,বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল আর আস্থার সংকটে ভুগছে নেতাকর্মীরা। কারো প্রতি কেউ রাখতে পারছে না ভরসা। ফলে হঠাৎ হঠাৎ দলটিতে দেখা দিচ্ছে উপ-দলীয় কোন্দল। কখনো জেলা নেতাদের সাথে উপজেলার আবার মূল দলের নেতাদের সাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রায়শই বর্হিপ্রকাশ ঘটছে।
দুই বছর ধরেই জেলাশহরের ২০ থেকে ৩০ বার রক্তক্ষয়ী সংঘাত, পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত কর্মীরাও এখন হতাশায় নিমজ্জিত।
এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা নেতৃত্বের ব্যর্থতা দেখছেন সবকটি উপজেলার সভাপতি এবং সা: সম্পাদকরা। তাঁদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি হাজী মো: কাশেম এবং মাটিরাঙা উপজেলা সভাপতি ও পৌর মেয়র মো: শামছুল হক এই সভা ডাকেন। এই দুই নেতা যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও বছর তিনেক আগে গঠিত পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য পদ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু গত পৌর নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই দুই নেতাই জেলা আওয়ামীলীগের বড়ো ভরসা হয়ে উঠেছেন। তাঁদের আহব্বানেই সাড়া দিয়ে শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা শাখার সভাপতি ও সা: সম্পাদক এবং পৌর শাখার সভাপতি ও সা: সম্পাদকরা একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন।
এতে উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক নীলোৎপল খীসা, সা: সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল, লক্ষীছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সা: সম্পাদক মো: বেলাল, পানছড়ি উপজেলা সভাপতি বাহার মিয়া, সা: সম্পাদক জয়নাথ দেব, রামগড় উপজেলার সদস্য-সচিব কাজী আলমগীর, মাটিরাঙার সা: সম্পাদক সুভাষ চাকমা, রামগড় পৌর শাখার সভাপতি কামাল হোসেন ও সা: সম্পাদক বিশ্ব ত্রিপুরা, দীঘিনালার সা: সম্পাদক বিদ্যুৎ বরণ চাকমা এবং সদর উপজেলার সা: সম্পাদক চন্দন কুমার দে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, টানা দুই মেয়াদে জেলায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও তৃণমূলে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড সমভাবে প্রতিফলন ঘটছে না। কতিপয় নেতা স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে উন্নয়ণ বৈষম্য সৃষ্টি করছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দলের উপজেলা নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচিত দলীয় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বাহার মিয়া বলেন, জেলায় নিয়োগ থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে সমন্বয় না করায় মতদ্বৈততা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া আগামী এক বছরের মাথায় অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতির লক্ষেই মিলিত হয়েছি।
মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক মো: মাঈনুদ্দিন এই সভায় যোগ দেননি। কেন দেননি তার উত্তরে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এমনিতে জেলায় নানামুখী দ্বন্ধ সংঘাত লেগে আছে। তার ওপর কে কোন দিকে কোন স্বার্থে সভা ডেকেছেন তা পরিস্কার ছিলনা।
তিনি দাবি করেন, দলের বৃহত্তর ঐক্য এবং জনস্বার্থে দিনব্যাপি বৈঠক হওয়া উচিত।
সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক চন্দন কুমার দে বলেন, দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ সুসংগঠিত করা, দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতকে যাতে জেলা পরিষদসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে প্রতিপলন ঘটে সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক সুভাষ চাকমা বলেন, দলো রবদান্যতায় পদ-পদবী পেয়ে অনেকে দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করছেন। কখনো কখনো অসম্মানের অভিযোগও উঠছে। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলকে এগিয়ে রাখেন।
তিনি দাবি করেন, সভায় দু’একজন সভাপতি সম্পাদক সামাজিক এবং ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় অনুপস্থিত থাকলেও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে টেলিফোনে একমত প্রকাশ করেছেন।
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক জয়নাথ দেব বলেন, ত্যাগ আর আদর্শ নির্ভর দলে নৈতিকতার মূল্যায়ন না হলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। এটি না হবার আগেই যাতে আমরা ভুল- ত্রুটি শোধরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারি সেজন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সভার অন্যতম আয়োজক এবং দলের আগামী কাউন্সিলে সা: সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মো: শামসুল হক বলেন, সভা আজ মূলতবি করা হয়েছে তাই কোন সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত হয়নি। তবে সবার মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে প্রথমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পরে সংসদ সদস্য ও জেলা সভাপতি’র সাথে বসবো। এরপর নতুন করনীয় নির্ধারণের কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন