খাগড়াছড়িতে লাশের মিছিল : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭ জন, আহত ৩

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পুলিশ লাশ নিয়ে আসে
খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমাসহ ৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বণির্ভর বাজারে এঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো, ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক এলটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সহ সভাপতি পলাশ চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমা, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রূপন চাকমা, খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া এলাকার বাসিন্দা শন কুমার চাকমা ও বিএসসি প্রকৌশলী পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি গ্রামের ধীরাজ চাকমা। আহতরা হলো, পিসিপি কর্মী সোহেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কর্মী সমর চাকমা ও সখীধন চাকমা।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বণির্ভরস্থ ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা অফিস ও সিএনজি স্টেশন এলাকা থেকে হঠাৎ করে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। স্বণির্ভর বাজারের ইউপিডিএফ কার্যালয় ও আশপাশে অবস্থান কর্মীদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ঁতে থাকে। এসময় আত্মরক্ষার্থে ইউপিডিএফর লোকজনও গুলি ছুঁড়ে। খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ জনের মরদেহ এবং ৬ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। আহতদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আরও ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বাকী ৩জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। স্বণির্ভর বাজারের হামলার সময় পালিয়ে পথে রাস্তার উপর পড়ে দিয়ে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত শন কুমার ত্রিপুরাকে দুপুরে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩টা ২৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি সদরের স্বণির্ভর বাজারে বিজিবির অবস্থান, ঘটনার পরপর জনমানবশুন্য হয়ে পড়ে স্বণির্ভর এলাকা
এদিকে ঘটনার পর স্বণির্ভর বাজার এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। ঘটনার পরপর পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করায় স্বণির্ভর বাজার বন্ধ রয়েছে।
নিহত ধীরাজ চাকমার মামা সুপ্রিয় চাকমা বলেন, তার ভাগিনা ঈদের ছুটিতে আজ (শনিবার) ঢাকা থেকে এসেছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য স্বণির্ভরের পানছড়ি সিএনজি স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। সে একটি বেসরকারি কোম্পানীতে প্রকৌশলী পদে চাকরী করত।
ঘটনার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করেছেন ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
ইউপিডিএফ মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, সকালে সাংগঠনিক কাজে স্বণির্ভর বাজারের অফিসে অবস্থান করছিল নেতাকর্মীরা। এসময় জেএসএস এমএন লারমা ও নব্য মুখোশ(ইউপিডিএফ) গণতান্ত্রিকের ১৫-২০ জনের সশস্ত্র দুইটি গ্রুপ অফিসের সামনে ও আশপাশে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে সংগঠনের ৩ নেতাসহ ৭ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা চিহ্নিত ও প্রশাসনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করে বিগত ৮ মাসে নব্য মুখোশ বাহিনীর হাতে নিহত ২১ ইউপিডিএফ নেতাকর্মী হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেএসএস এমএন লারমার মুখপাত্র সুধাকর ত্রিপুরার মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: নয়নময় ত্রিপুরা বলেন, গুলিবিদ্ধ ৯জনকে হাসপাতালে আনার পর ৬ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকী ৩জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে প্রেরণ করা হয়েছে। হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় পড়ে মাথার আঘাতপ্রাপ্ত একরোগী বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে একের পর এক লাশ রাখছে পুলিশ
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসতা ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকান্ড। পুলিশ ঘটনার প্রকৃতি রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।
এর আগে, গত ৪ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বেতছড়ি এলাকায় প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের প্রতিষ্ঠা সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন নিহত হয়। ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপকে দায়ী করেছিল। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফর দলছুট কিছু নেতা জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সাথে মিলে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ভ্রাতৃঘাতী শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ। চুক্তি পরবর্তী ২০ বছরে ইউপিডিএফর ৩ শ’র মতো নেতাকর্মী প্রতিপক্ষের গুলিতে ও হামলায় নিহত হয়েছে। একই ভাবে অন্য আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি(সন্তু) ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গ্রুপের হতাহতের সংখ্যাও প্রায় ২ শতাধিক।

আরও পড়ুন