খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে শিক্ষায় খলিল, সম্পদে নির্মলেন্দু ও রফিক এগিয়ে

NewsDetails_01

ইতোমধ্যেই পৌর নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। আগামী ১৬-ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এবারের আসরে প্রতিদ্বন্দ্বী চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই অবস্থানগতভাবে বেশ শক্তিশালী। এই তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল ও স্বতন্ত্র পরিচয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র রফিকুল আলম। এই তিনজন ছাড়া জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ এখন অব্দি মাঠে থাকলেও আলোচনায় নেই তিনি।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল শিক্ষাগত যোগ্যতায় সর্বোচ্চ। আর অর্থসম্পদ ও আয়ের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহিম খলিলের হলফনামায় সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে ‘এল.এল.বি’ আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী নিজেকে ‘এইচ.এস.সি’ পাস বলে উল্লেখ করেছেন। অপর দুই প্রার্থী বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্ল্যেখ করেছেন ‘স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন’।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহিম খলিলের নামে মামলা চলমান রয়েছে চারটি। এছাড়া পূর্ববর্তী ১৪টি মামলার মধ্যে ৬টি মামলায় খালাস, ৫টি মামলায় অব্যাহতি এবং ৩টি মামলায় ডিস-চার্জ পেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলমের নামে দুটি মামলা চলমান এবং পূর্ববর্তী ৩৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। তবে অপর দুই প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী এবং ফিরোজ আহমেদ এর নামে কোন মামলা নেই।
এছাড়া বিএনপি প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল ব্যবসা খাতে তার বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখা গেছে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে খলিলের বিনিয়োগ রয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ১’শ টাকা। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যধাতু ১০ ভরি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আসবাবপত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেডিক্যাল সেন্টার (প্রাঃ) লিঃ এর শেয়ার বাবদ মূলধন ২ লাখ টাকা। এছাড়াও খলিলের স্থাবর সম্পদ হিসেবে অকৃষি জমি ০.১৭ একর যার অর্জনকালীন মূল্য ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

NewsDetails_03

আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ব্যবসা খাতে তার বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে বাৎসরিক সম্মানীভাতা ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। নির্মলেন্দু চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখা গেছে নিজের নামে নগদ ১ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে নগদ ১ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ নিজ নামে ৫ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা। । পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে নির্মলেন্দু চৌধুরীর স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও তার ১৫ লাখ টাকার ১টি পুরোনো পাজেরো জীপ, ১ লাখ টাকার স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, ১ লাখ টাকার ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আসবাবপত্রসহ অন্যান্য খাতে ৬ লাখ ১২ হাজার ৫’শ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। আর স্থাবর সম্পদ হিসেবে যৌথ মালিকানায় ২.৪০ একর কৃষিজমি, নিজ নামে ০.২৪ একর অকৃষি জমি, ১টি দোকান প্লট ও নিজ নামে নির্মাণাধীন একটি বাড়ি রয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ এর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজের নামে নগদ দেড় লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত দেড় হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১০ তোলা স্বর্ণ, ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আসবাবপত্র। এছাড়া তার স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে নিজ নামে ৫ একর মিশ্র ফলজ বাগান এবং পিতার নামে ১টি সেমি পাঁকা বাড়ি। আর ব্যবসা হতে তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলমের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজ নামে নগদ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ১ লাখ ১৩ হাজার ২’শ ৭৯ টাকা, স্ত্রীর নামে ৪ লাখ টাকার এফডিআর ও মেয়ের নামে ১ লাখ টাকার এফডিআর। রফিকুলের স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ ভরি স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু। ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মধ্যে ২টি টেলিভিশন, ২টি রেফ্রিজারেটর, ২টি ল্যাপটপ, ১টি কম্পিউটার ও ১টি এসি। এছাড়া তার আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে ৩টি বক্স খাট, ২ সেট সোফা, ওয়ারড্রপ ২টি, আলমিরা ২টি, ২টি ড্রেসিং টেবিল ও ১টি ডাইনিং টেবিল। আর স্থাবর সম্পদ হিসেবে রফিকুল আলমের যৌথ মালিকানায় ৭.২০ একর কৃষি জমি রয়েছে। নিজ নামে রয়েছে ১০ একর অকৃষি জমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক জমি রয়েছে ৩৫ শতক।

বিগত ২০১৫ সালের নির্বাচনী হলফনামায় কৃষি খাত, দোকান ভাড়া ও ব্যবসা হতে রফিকুল আলমের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিলো ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, তবে এবারের হলফনামায় তার কিছুই উল্লেখ নেই। এবার বাৎসরিক আয় হিসেবে তিনি কেবল উল্লেখ করেছেন ব্যবসা খাতে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১’শ ৬৭ টাকা এবং খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র হিসেবে বাৎসরিক সম্মানীভাতা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন