গান গাইতে না পারায় বান্দরবানে শিক্ষার্থীকে পেটালেন শিক্ষক !

অভিযোগ আল ফারুক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক জামালের বিরুদ্ধে

NewsDetails_01

বান্দরবান শহরের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে গান গাই‌তে না পারায় পেটানোর অভিযোগ উঠেছে আল ফারুক ইনস্টিটিউটের সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এই ঘটনা ঘটে।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওই শিক্ষার্থী জানায়, তৃতীয় ঘণ্টায় বাংলা শিক্ষক না আসায় ক্লাস‌টি খা‌লি ছিল। এসময় কোনও ক্লাস না থাকা স‌ত্ত্বেও শিক্ষক জামাল উদ্দিন এসেই আমাকে গান গাইতে বলেন। আমি গান পা‌রি না জানানোয় তি‌নি ক্লাস থেকে বেরিয়ে অন্যরুম থেকে এক‌টি বেত এনে এলোপাথা‌রি পেটাতে থাকেন। এসময় বেত ছাড়াও হাত দি‌য়ে চু‌লের মু‌ঠি ধরে চড়-থাপ্পড় দেন।

বিদ্যাল‌য়ের একা‌ধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, শিক্ষক জামাল উদ্দিনের মাথা একটু গরম। কোনও কারণ ছাড়াই এর আগেও অনেক শিক্ষার্থী‌কে এভাবে পিটিয়েছেন তিনি। এ বিষ‌য়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগা‌যো‌গ করা সম্ভব হয়নি।

আল ফারুক ইনস্টি‌টিউটের অধ্যক্ষ মো. এমদাদ উল্লাহ বলেন, ক্লাসে গান গাইতে হ‌বে এটার কোনও নিয়ম নেই। শিক্ষার্থী‌কে মারধ‌রের আঘাতের চিহ্ন আ‌মি দে‌খে‌ছি। অভিভাবকরাও আমার কাছে এসেছিলেন। আমি অবশ্যই এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেবো।

আরো জানা গেছে,বান্দরবান শহরের আল ফারুক ইনস্টি‌টিউট মূলত জামায়েত ইসলামি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের উদ্দ্যেগে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মরত শিক্ষকরা ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এর আগেও শিক্ষক কর্তৃক একাধিকবার সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো এবং ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়।

NewsDetails_03

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোমা রানী বড়ুয়া বলেন, আমি ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে এ বিষ‌য়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

গত বছরের ১০ জুন নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনায় বান্দরবানের আল ফারুক ইনস্টিটিউট স্কুলের একটি কক্ষে গোপন সভা করার সময় ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ৫ নারীকর্মী ও একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের দপ্তরিকে আটক করে পুলিশ।

কি আছে আইনে ?

১৯৭৯ সালের শিক্ষক আচরণবিধিতে বাচ্চাদের মারধর না করার নির্দেশ রয়েছে । ২০১১ সালে হাইকোর্ট শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেয়ার বিষয়টি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ৷ আর হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি পরিপত্রও জারি করে৷ এই পরিপত্রই আইন ৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী নিষিদ্ধ করা শাস্তিগুলো হলো: হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত, শিক্ষার্থীর দিকে চক বা ডাস্টার জাতীয় বস্তু ছুড়ে মারা, আছাড় দেয়া ও চিমটি কাটা, কামড় দেওয়া, চুল টানা বা চুল কেটে দেওয়া, হাতের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল চাপা দিয়ে মোচড় দেওয়া, ঘাড় ধাক্কা, কান টানা বা উঠবস করানো, চেয়ার, টেবিল বা কোনো কিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা, রোদে দাঁড় করিয়ে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো এবং ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করানো, যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ ৷

এই পরিপত্রে শাস্তির কথাও বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ শিশুদের শারীরিক শাস্তি দিলে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি হবে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে ৷ অভিযোগের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে ৷ প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে ৷

আরও পড়ুন