জীনামেজু অনাথ আশ্রমের সম্মাননা পেলেন সাংবাদিক আল ফয়সাল বিকাশ

NewsDetails_01

জীনামেজু অনাথ আশ্রম হতে সম্মাননা স্মারক পেলেন বাংলাভিশন টিভি চ্যানেলের বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি ও বিইউজে’র সভাপতি আল ফয়সাল বিকাশ। জীনামেজু অনাথ আশ্রমের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিশেষ আবদান রাখার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়।

বান্দরবান জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের নিবন্ধন ও ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রাপ্তির ২০ বছর পুর্তি উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা স্মারকটি সাংবাদিক আল ফয়সাল বিকাশের হাতে তুলে দেন জীনামেজু অনাথ আশ্রমের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ নন্দমালা থের। সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে আশ্রমের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আশ্রমের স্মৃতিচারণ করে আল ফয়সাল বিকাশ বলেন, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ইয়াংছা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত জীনামেজু অনাথ আশ্রমের পদযাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অতি দুর্গম ও পশ্চাৎপদ একটি জনপদের নাম ত্রিশডেবা। সাংবাদিকতার সুবাদে ১৯৯৭ সালে পরিচয় ঘটে ত্রিশডেবা বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ভদন্ত উ নন্দমালার সাথে। অত্যন্ত বিনয়ী, নিরহংকারী, বিচক্ষণ আর অদম্য সাহসী এই মানুষটি সত্যিকার অর্থে একজন জ্ঞানপুরুষ। তবে তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতেন না, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ভেঙ্গে ভেঙে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু আমার সাথে তিনি মারমা ভাষাতেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। ১৯৯৯ সালে তিনি হঠাৎ বান্দরবান শহরে এসে আমাকে খুঁজে বের করলেন আর বললেন ত্রিশডেবা বৌদ্ধ বিহারে ২৫/২৬ জনের মতো অনাথ শিশু আছে তাদের নিয়ে একটি আশ্রম করবেন। আমি সম্মতি জ্ঞাপন করে উৎসাহ যোগালাম। ত্রিশডেবা জীনামেজু অনাথ আশ্রম নাম দিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত এই আশ্রমটির পথ চলা শুরু হয়।

২০০২ সালের প্রথম দিকে আশ্রমটির রেজুলেশন তৈরী করে লামা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে জমা দেয়া হয়। সমাজ সেবা অফিস রেজুলেশনটি শুদ্ধ করে দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন ও ক্যাপিটেশন গ্রান্টের জন্য আবেদন জমা দেন। ২০০২ সালের ২১ জুলাই সমাজসেবা অফিসের রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে এবং ২ জন অনাথ শিশুর ক্যাপিটেশন মঞ্জুর করে।

NewsDetails_03

রেজিষ্ট্রেশন লাভের পর আশ্রমের অধ্যক্ষ নন্দমালা ভিক্ষু আগ্রহ প্রকাশ করলেন জীনামেজু নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশের। বসে গেলাম পান্ডুলিপি প্রস্তুতের। বাংলা, ইংরেজি ও মারমা এই তিন ভাষার সংমিশ্রনে জীনামেজু নামে স্মরণিকার আত্মপ্রকাশ হয় ১৯ জুন ২০০৩ সালে।

অধ্যক্ষ নন্দমালা ভিক্ষু তখন বাল্যশিক্ষা পড়ে বাংলা বর্ণমালার জ্ঞান রপ্ত করতে পারলেও অধিকাংশ বাক্যের অর্থ বুঝতেন না। আমাকে মারমা ভাষা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হতো ঐ বাক্যের অর্থ কি। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা আশ্রমটি চরম অর্থ সংকট থাকলেও সকল বাঁধা বিপত্তি, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। জানিনা অনাথ আশ্রমটির সেবায় নিজেকে কতটুকু সম্পৃক্ত রাখতে পেরেছি। তবে শিক্ষার আলো পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছড়িয়ে দিতে অদম্য কর্ম স্পৃহা আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মানুষটি হচ্ছেন জীনামেজু অনাথ আশ্রমের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ নন্দমালা ভিক্ষু।

সেই সাথে যাদের অবদানে আজ শতাধিক অনাথ শিশুর ঠিকানা হয়েছে তাদের শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মহোদয়ের অবদানকে সম্মান জানাই। আশ্রমের বিষয় নিয়ে যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। তাই এই দুই মহানুভবতার কাছে সব সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

কারো কাজের স্বীকৃতি সরূপ সম্মননা পাওয়াটা অনেক গর্ভের। কাজের ফাঁকে কখন যে ২২টি বছর পেরিয়ে গেল টেরও পেলাম না। কিন্তু আজ আমাকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য যে সম্মাননা স্মারকটি দিয়েছে তা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আশ্রমের শিক্ষার্থিদের কল্যানে অবদানের জন্য উপহার সরূপ আমাকে সম্মাননা স্মারক দেয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে জীনামেজু অনাথ আশ্রমের অধ্যক্ষসহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন