টাকায় সব : উচ্চমান সহকারীর হাতে জিম্মি মাটিরাঙার প্রাথমিক শিক্ষা !

NewsDetails_01

মাটিরাঙা উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী মনির আহাম্মদ
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী মনির আহাম্মদের হাতে জিম্মি উপজেলার ৮৭টি বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মককর্তা কর্মচারীরা। চাকুরীতে যোগদান থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে শিক্ষকদের কাজ থেকে সে গ্রহণ করছে মর্জি মাফিক উৎকোচ। উৎকোচ দিতে ব্যর্থ বা অসম্মতি জানালে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষকদের। লাগামহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওই উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে গত ১৫ মে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মাটিরাঙার ভবানীচরণ রোয়াজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এরশাদ আলী জানান,উচ্চমান সহকারী মনির আহাম্মদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেন। প্রতিবছর সরকার প্রদত্ত স্লিপের চল্লিশ হাজার টাকা পেতে প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয় মনির আহাম্মদকে। টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না তিনি।
বলিচন্দ্র পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাদির আলী জানান, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা থেকে শতকরা ১৫% করে টাকা কেটে রাখেন মনির আহাম্মদ। টাকা না দেয়ায় গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আন্ত:ক্রীড়া প্রতিযোগীতার বিল দেয়া হয়নি অনেক বিদ্যালয়ে।
বরণ ত্রিপুরা নামে এক সহকারী শিক্ষক জানান, নতুন শিক্ষকদের যোগদানের সময় মনির আহাম্মদকে টাকা না দিলে কাগজপত্র গ্রহণ কিংবা সার্ভিস বুক ওপেন করেন না। অনেক সময় শিক্ষকরা উচ্চ শিক্ষার অনুমতি নিতে গিয়েও তাকে উৎকোচ দিতে হয়। এক কথায় শিক্ষা অফিস মনির আহাম্মদের হাতেই জিম্মি।
নাম না প্রকাশে অনুরোধ রেখে অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, মনির আহাম্মদের বিবেক বলতে কিছু নেই, টাকা ছাড়া সে কিছু বুঝেনা। অবসর গ্রহণের দেড় বছর পরও পেনশনের ফাইল নিয়ে শিক্ষা অফিসে ছুটাছুটি করতে হচ্ছে। তার দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় ফাইল পাচ্ছি না।
মাটিরাঙা শিক্ষা অফিসের এক-কর্মচারী জানান, মনির আহাম্মদের কথায় শিক্ষা অফিস চলে। তার দুলা ভাই সাইফুল ইসলাম খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নাজির। দুলা ভাইয়ের ক্ষমতা দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে রমরমা অনিয়মের পসরা সাজিয়ে বসিয়েছে সে। সম্প্রতি সময়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সমাবেশ চাকমাকে অফিসের ভেতর লাঞ্ছিত করেন। এই ব্যাপারে উচ্চমান সহকারী মনির আহাম্মদের সাথে মঙ্গলবার দুপুরে অফিসে দেখা করতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে এর আগেও অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছিল। এখন লিখিত অভিযোগ আসায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নুরুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন