দীঘিনালায় ত্রাণের আশায় হত দরিদ্ররা

NewsDetails_01

কোভিড-১৯ পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। অনেকে জীবিকা হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছেন। আবার ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায় নেমেছে ধস। শ্রমজীবীরা হয়ে পরেছে কর্মহীন। যে মানুষ হাত পাততেন না, সেই মানুষও রাস্তায় সাহায্যের আশায় হাত পাতছেন।

গত বছর করোনা শুরুর দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে উপজেলার অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে প্রদান করা হয়েছে নানা সহায়তা। বাদ যাননি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। সব ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে এ বছর করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করলেও সাহায্য-সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে উপজেলার ২ হাজার ৫০০ কর্মহীন ব্যক্তির মাঝে ৫ শত টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান ছাড়া কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিদেরও ত্রাণ নিয়ে মাঠে-ময়দানে আগের মত দেখা মিলছে না।

এদিকে এবছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি হারিয়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন শাখাওয়াত হোসেন ৷ লকডাউনে হয়ে পরেছেন কর্মহীন। অবশ্য এ পরিস্থিতিতে কোন আয় না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে।

তিনি জানান, করোনার ছাঁটাই অভিযানে চাকরি হারিয়েছি। নেই কোন আয়ের উৎস। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই দূর্বিষহ জীবনযাপন করছি। এমতাবস্থায় নিজের কষ্টের কথা কাকে বলবো?

আবার লকডাউনে টানা গাড়ি বন্ধ থাকায় বদল করেছেন পেশা। পেশা হিসেবে বেচে নিয়েছেন সবজি, আনারস কিংবা তরমুজ বিক্রেতা ৷ উপজেলার রশিক নগর গ্রামের মাহিন্দ্র চালক শাহআলম জানান, বসে থাকলে সংসার কে চালাবে? তাই ড্রাইভিং বাদ দিয়ে আনারস বিক্রি করছি।

NewsDetails_03

একই এলাকার শ্রমিক জামেনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি-বেসরকারি যেকোন ত্রাণ ও সহযোগীতা আসলে ইউপি মেম্বাররা নিজেদের পছন্দমত তালিকা করে সহযোগিতা প্রদান করে। আমাদের মতো খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য কি ত্রাণ নাই?

দীঘিনালা ত্রিপুরা কল্যান সংসদের সভাপতি ও ইউপি সদস্য ঘণশ্যাম ত্রিপুরা মানিক বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করছি৷ পাশাপাশি নিজের তরফ থেকেও এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন বলেন, মেরুং ইউনিয়নে অন্যসব ইউনিয়ন থেকে জনসংখ্যা বেশি। পাশাপাশি হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজনও বেশি। সরকারিভাবে যা অনুদান পাচ্ছি তা ক্রমান্বয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সরকার ঘোষিত লকডাউনের পাশাপাশি ফান্ডের অভাবে কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মন বোঝা খুব কঠিন। জনপ্রতিনিধিরা হয়তো মনে করছে, তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। আবার অনেকে দান নীরবে করতে পছন্দ করে। এখন সরকারি কঠোর বিধি-নিষেধ রয়েছে, তাই হয়তো অনেকেই প্রকাশ্যে করছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। আমরা বর্তমানে উপজেলায় ২৫শত পরিবারের মাঝে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। সরকারি সকল ত্রাণ ও অনুদান কর্মহীন, অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে সুষ্ঠুভাবে প্রদান করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন