নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মানুষের নির্ঘুম রাত : সরানো হলো ৫৫ পরিবার

NewsDetails_01

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিপি) এর সাথে সেদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) এর দখল করে নেওয়া ১২টি চৌকি পূন:রুদ্ধারের ঘটনায় সীমান্তে প্রচন্ড গোলাগুলি শব্দে এপারের সীমান্তবাসীরা শনিবার রাতভর আতঙ্কে রাত পার করে, ফলে রোববার পর্যন্ত সীমান্তের প্রায় ৫৫ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত এলাকা থেকে সরানো হয়।

সূত্রে জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৩ পিলার থেকে ৫০ পিলার জুড়ে গভীর রাতে দফায় দফায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসায় এপারের বাসিন্দাদের মনে আতঙ্কে বিরাজ করে। ২৩ অক্টোবর রবিবার ভোরবেলা সীমান্তের ওপার থেকে ফের গোলাগুলির শব্দ এপারের সীমান্তবাসীদের আতঙ্কিত করলে বিকালের দিকে পরিস্থিতি শান্ত থাকে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪ পিলার নিকটবর্তী আবদুর রহমান, মোহামাদ হাশেম জানান, শনিবারের গোলাগুলির ঘটনার পর শিশু ও নারীরা ঘরের গৃহপালিত গরু-ছাগলসহ পালিয়ে আশ্রয় নেয় দূরের স্বজনদের বাসা বাড়িতে।

এদিকে সীমান্তের ওপারে সেদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখল করে নেওয়া প্রায় ১২টি চৌকি পূনঃরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি)র প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে এপারে গত শনিবার দুপুর থেকে আতংক বিরাজ করে। এরপর গভীর রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের আওয়াজ শুনতে পায় সীমান্তে বসবাসরত লোকজন। ফলে ভারী অস্ত্রের আওয়াজে কম্পিত হচ্ছে এপারের ভূখন্ড। এসময় সীমান্তের বসবাসরত লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে আত্মিয়স্বজনদের বাসায় আশ্রয় গ্রহন করলেও কোন হতহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল আবছার ইমন ও দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইমরান।

এদিকে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল আবছার ইমন জানান, গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যান্তরে তাদের বিদ্রোহী গ্রুপ এর সাথে সেদেশের সীমান্ত রক্ষিবাহিনীর (বিজিপি) মধ্যকার চৌকি দখল নিয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শব্দ শুনতে পায়। এসময় পরক্ষণে বেশ কয়েটা গুলি আমাদের ভূখন্ডে এসে পড়লে সীমান্তে বসবাসরত ৩০টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসি।

NewsDetails_03

অপর দিকে দৌছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইমরান জানান, গত শনিবার দুপুরে সীমান্ত পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সহযোগিতায় সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসরত ২৫টি পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়। তবে আজ রবিবার এখনো কোন গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়নি।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি’র মধ্যে গত ২ মাসের সংঘাতের ঘটনায় মিয়ানমারের বিজিপি নিজেদের নিরাপত্তা চৌকি ছেড়ে পিছু হটলেও তারা শনিবার ফের তাদের সীমান্ত চৌকি পূণ:দখল করে। আগামী কয়েকদিনে আরো নিরাপত্তা চৌকি পূর্ন: দখলকে কেন্দ্র করে সীমান্তের ওপারে সংঘাতে ঝাঝ বাড়তে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

৪৫ নম্বর পিলার এলাকার ইউপি মেম্বার ছাবের আহমদ জানান,তার এলাকার ওপারের সীমান্ত চৌকি পূণঃদখলে নিতে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে তিনি ধারনা করছেন।

অন্যদিকে ৫০ নম্বর পিলারের বাসিন্দা রাসেল জানান, শনিবার দুপুরে অনেক গোলাগুলি হয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত ওপারের চৌকির দিকে। বেশ কয়েকটি গুলি আমাদের ভূখন্ডে এসে পড়েছে। কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে সেখানে কিছু একটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আতংকিত কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে।

বিজিবি’র একটি সূত্র দাবী করেন, বিজিবি জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং সীমান্তে টহলও জোরদার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন