সাঙ্গু নদী, স্থানীয়ভাবে পরিচিত শঙ্খনদী নামে। স্থানীয় অধিবাসীদের পানির ছাহিদার শতভাগ এই নদী থেকে পূরণ হলে ও নানা কারণে নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে। আর এসব কারণে নদীর ওপর নির্ভরশীলদের জীবন ও জীবিকা পড়েছে হুমকির মুখে।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার মদক এলাকার পাহাড়ে জন্ম একসময়ের খর¯্রােতা নদী সাঙ্গুর। পাহাড়ের অসংখ্য ঝিরি ঝরনার পানি গিয়ে মিশেছে এ নদীতে। উৎসমুখ থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম জেলার ওপর বয়ে গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এ নদীটিকে ঘিরেই যুগের পর যুগ ধরে গড়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান। কিন্তু দিন দিন নদীর গভীরতা কমে পানি শুকিয়ে নদীটি এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। ফলে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন জিবিকায় নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা।
বান্দরবান উজানী পাড়ার বাসিন্দা আবু থোয়াই জানান, একসময় প্রচুর পানি থাকলে ও দিন দিন পানি কমে যাওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দাদের।
কালাঘাটা জেলে পাড়ার বাসিন্দা সবিতা জলদাশ জানান, পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এই সাংগু নদী , কিন্তুু দিন দিন পানি শুকিয়ে নদীটি মরা প্রায় । আর এই কারণে মাছ নেই , পানি নেই নেই কোন আয়ের উৎস।
কালাঘাটা জেলে পাড়ার বাসিন্দা গৌতম জলদাশ জানান, নদীকে ঘিরে প্রায় একশর উপর লেকের জীবন চলতো , কিন্তু নদীতে নাব্যতা সংকটে নৌকা চলে না, পানি না থাকায় মাছ নেই আর নদী থেকে উপার্জনের পথ বন্ধ বলে অনেক জেলে পরিবার অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে ।
বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের সাথে শীলামাটি ও পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে আরও আগেই। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাত্র দুএকদিনের বৃষ্টিতে নদীটি প্লাবিত করছে থানচি-রুমা- রোয়াংছড়ি এবং বান্দরবানসহ চারটি উপজেলার বিস্তির্ন এলাকা। আবার শুস্ক মৌসুমে পরিণত হচ্ছে ধুধু বালুচরে। আর শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এই নদীকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহীরা পড়ছে বিপাকে।
এদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাথে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন, ঝিরি ঝরনা থেকে মাত্রাতিরিক্ত পাথর আহরণসহ নানা কারণে এখন নদীতে পানির প্রবাহ কমেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আর দীর্ঘদিন ডেজিং না করায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর বেশির ভাগ জায়গা।
বান্দরবানের সমাজকর্মী অং চা মং জানান, নদীটি কখন ও ডেজিং হয়নি , তাই নদীতে বিভিন্ন দিকের মাটি এসে জমাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে শুস্ক মেীসুমে তাই ধুধু বালুচর আর কয়েকদিনের টানা ব্রষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। স্থানীয় বাসিন্দা মো.রহমত জানান স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই নদীকে রক্ষা করা। নদীকে খনন করে এর স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রাখা।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান ,স্থানীয় জনসাধারণের জীবনধারনের প্রয়োজনীয় পানির উৎস এই সাংগু নদীকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে এবং এই নদীর খননে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংগু নদীকে ঘিরেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ জেলার প্রায় ১১টি সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত, তাই কালক্ষেপন না করে দ্রুত এ নদীকে ডেজিং করে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রেখে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রাকে সুদুর প্রসারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে স্থানীয়রা।