পানির সংকটে নাকাল নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষের জনজীবন

NewsDetails_01

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর উপজেলাসহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, এবং তার সাথে শুকিয়ে যাচ্ছে উপজেলার একমাত্র উপবন লেকসহ পুকুরের পনি, ফলে তীব্র পানির সংকটে আছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খাল, বিল, নদী, কৃত্রিম লেক ও পুকুর গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ফলে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। পাহাড়ি জনপদের এসব গ্রামবাসীকে এখন দূর-দূরান্তের নলকূপ এবং ছড়ার পাড়ে মাটি কুঁড়ে আনতে হচ্ছে পানি।

আরো জানা গেছে, পানীয় জলের সংকটে থাকা এ গ্রামগুলো হচ্ছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, কম্বোনিয়া,আশারতলী, ছালামী পাড়া, ফুট্টাঝিরি,মধ্যোম চাক পাড়া, চাক হেডম্যান পাড়া, নতুন চাকপাড়া,দক্ষিন বিছামারা,উত্তর বিছামারা, বাগানঘোনা,দক্ষিন বড়ুয়া পাড়া,ব্যবসায়ীপাড়া,ঘিরাতলী,উত্তর বড়ুয়া পাড়া, ঠান্ডাঝিরি, ধুংরী হেডম্যানপাড়া,স্কুল পাড়া, মসজিদঘোনা,মাহাজনঘোনা,আর্দশগ্রাম,বাস ষ্টেশন, ইসলামপুর, রেস্টহাউজ এলাকা, বাজার পাড়া এবং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলীয়াছড়ি, জুমখোলা, নন্নারকাটা মার্মাপাড়া, হেডম্যানপাড়া,বদ্যছড়া ও দৌছড়ি ইউনিয়নের পাইনছড়ি, ধর্মছড়া, বাহিরমাঠ, গুরাইন্ন্যাকাটা, তুলাতুলি, জারুলীয়াছড়ি,ক্রুরিক্ষং,লেমুছড়ি।

উপজেলার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন ইসলামী সংস্থা ও সরকারী ভাবে অসংখ্য হস্তচালিত নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে এবং ব্যবহারের খাল, লেক, পুকুর ও কূপের পানিও ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামগুলোয় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ ও ব্যবহারিক পানির তীব্র সংকট। সদর উপজেলায় কৃত্রিম লেকের ব্যবহারিক পানি তিন থেকে চার হাজার পরিবারের লোকজন নিয়মিত পানি ব্যবহার করে আসছিলো প্রতি বছর। সেই লাকের পানিও ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ায় খাওয়ার পানির সঙ্গে দৈনন্দিন ব্যবহারের পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে। কোনো গ্রামের একটি নলকূপে পানি ওঠার সংবাদ পেলে ওই গ্রামসহ পানি সংকটে থাকা আশপাশের গ্রামবাসী ওই নলকূপে ভিড় করে।

চাক হেডম্যানপাড়ার ২৭০নং মৌজার হেডম্যান বাচিং অং চাক বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এই এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকে। পাহাড়ি গ্রামগুলোর মাটির নিচে পাথর থাকে। এখানে হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা যায় না। তাই পানি তুলতে বসাতে হয় রিংওয়েল নলকূপ কিন্তু এটি ব্যয়সাপেক্ষ। তাই ক্ষুদ্র জাতিসত্তা-অধ্যুষিত দরিদ্র গ্রামবাসীর পক্ষে এই নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। ফলে পানিসংকটে ভুগতেই হচ্ছে তাদের।

NewsDetails_03

দৌছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, লেমুছড়ি গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় ৮শ থেকে ১হাজার মানুষ বাস করে। এখানে পানির জন্য রিংওয়েল নলকূপ ও পুকুর রয়েছে কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমে রিংওয়েল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পানিসংকটে ভুগছে এখানকার লোকজন।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যানিং মার্মা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নলকূপ গুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এতে পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষগুলো অনেক দিন ধরেই বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে আর এদিকে খাল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে আসার কারনে ব্যবহারিক পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। যদি সরকারি সংস্থা কিংবা সরকারি উদ্যোগে এসব এলাকায় ‘সেমি ডিপ টিউবওয়েল’ স্থাপন করা হলে পানির সংকট কমত।

সদর উপজেলার ধুংরী হেডম্যানপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মংশৈ প্রু চৌধুরী বলেন, উপজেলার আদিবাসী-অধ্যুষিত পাহাড়ি জনপদে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বিশেষ করে লেকের মার্মাপাড়া, ধুংরী হেডম্যান পাড়া,উত্তর বিছামারা,আর্দশগ্রামসহ সদর এলাকায় বিশুদ্ধ ও ব্যবহারিক পানির সংকট তীব্র।

উপজেলা কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি জানান, পাহাড়ের পানির সমস্যা নিরসনের জন্য সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যমে প্রায় ১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নাইক্ষ্যংছড়িবাসীর পানি সমস্যা অনেকটা নিরসন হবে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো, শাহ আজিজ জানান,এ পাহাড়ী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আরও কিছু নলকূপ স্থাপন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পানির সংকট নিরসনের লক্ষে ১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সেই প্রকল্পটি বাস্তায়ন হলে নাইক্ষ্যংছড়িতে অধিকাংশ পানি সংকট নিরসন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা জন্য চলতি বছরের ১৭ মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানও নির্ধারন করা হচ্ছে শিগগিরই। স্থান নির্ধারন চূড়ান্ত হলে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন