পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২০ বছরেও কাটেনি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক

NewsDetails_01

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করছে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার সন্ধিক্ষনে পাহাড়ে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও রয়েছে বিতর্ক । অমিমাংসিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পাহাড়ে বেড়েছে অবিশ্বাস, টানাপোড়েন আর শঙ্খা। আর এ নিয়ে বাড়ছে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে আতঙ্ক ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলায় কয়েক দশকের সংঘাতের পর শান্তির পথে ফিরে আসার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। শান্তি চুক্তির ২০ বছরে এরই মধ্যে সরকারের ৩৩টি বিভাগের মধ্যে ১৮টি বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বন ও পরিবেশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, সাধারণ প্রশাসনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসহ আরো অনেক বিভাগ হস্তান্তর করা হয়নি ২০ বছরেও। এছাড়াও অস্ত্র জমা দেয়া জনসংহতি সমিতির সদস্যদের পুর্ণবাসন, ভারত প্রত্যগত শরণার্থী এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি কারণে যারা আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হয়েছে তাদেরও পূর্ণবাসন করা হয়নি বলে দাবি জনসংহতি সমিতির।
আরো জানা গেছে, চুক্তি নিয়ে আশা নিরাশা ও হতাশা থাকলেও শান্তি চুক্তির পর সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সকল ধরনের সুবিধা ভোগ করছে পাহাড়ের মানুষ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তবে অবৈধ অস্ত্র, খুন, আওয়ামীলীগ নেতাদের অপহরণ, চাঁদাবাজির মত ঘটনা এসবের কারণে এরই মধ্যে জনসংহতি সমিতির সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে বেড়েছে দূরত্ব।
আরো জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থতি যুদ্ধ পরিস্থিতি কারণে যারা আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হয়েছে এখনও পর্যন্ত তাদের পুর্ণবাসন করা হয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের পুর্ণবাসন করা হয়নি। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য যারা অস্ত্র জমা দিয়েছে তাদেরকে পুর্ণবাসন করার কথা থাকলেও তাও করা হয়নি, সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে পার্বত্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রম। সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব রয়েছে যার কারণে চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কেএস মং বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অবস্থা ভিন্নতার দিকে গেলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে ।
চুক্তির পরে পাহাড়ে রাস্তাঘাটেরসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে জীবন জীবিকার উন্নয়ন না হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে আসে না। এছাড়াও পাহাড়ে চাষযোগ্য জমি অত্যন্ত কম তাই মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় জীবন জীবিকার উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থানের হার আরো বাড়ানো দরকার এমন মত স্থানীয়দের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক ক্য বা মং মার্মা বলেন, পাহাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার উন্নয়নে কর্মসংস্থান বাড়াতে উদ্দ্যেগ গ্রহন করা প্রয়োজন।
পাহাড়ে শান্তি চুক্তি হয়েছে বলে সরকারি-বেসরকারি সহ সব প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজেদের মত কাজ করতে পারছে। শান্তি চুক্তিকে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঠিকাদার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, এমনকি খেটে খাওয়া জুম চাষীদের থাকা চাঁদা গ্রহণ করছে জনসংহতি সমিতি, এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের।
বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি একে এম জাহাঙ্গীর বলেন,পাহাড়ে জনসংহতি সমিতির খুন খারাবি, চাঁদাবাজী, অস্ত্রের ঝনঝনানি চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা মনে করছে পাহাড়ের জেএসএসসহ আঞ্চলিক দলগুলোর অপরাধ মূলক কর্মকান্ড না কমলে পাহাড়ে প্রত্যাশিত শান্তি আনা সম্ভব হবেনা।

আরও পড়ুন