পাহাড়ধসে গলা পর্যন্ত ডুবে যাই

NewsDetails_01

পাহাড় ধসে নিহত রেবা ত্রিপুরা
ভারী বর্ষণ, কক্ষের মেঝেতে পানি পড়ছে। তার উপর ঘরের পাশেই পাহাড়। ভয় লাগছিল। ভয় কাটিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য মেঝে পরিষ্কার করছিলাম। পরে বিছানায় ঘুমানোর জন্য মশারি টাঙালাম। আর আমরা পাঁচ বন্ধুই মশারির ভিতরে বসে খোশ গল্প করছিলাম। রাত অনেক হওয়াতে বন্ধু রেবাসহ সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে বললাম। ফেসবুকে ব্যস্ত থাকা রেবাও ফেসবুক লগ আউট করে ঘুমিয়ে পড়ল। কথাগুলো বলছিলেন পাহাড়ধসে নিহত রেবা ত্রিপুরার বন্ধু সূর্য্য চাকমা।

সূর্য্য চাকমাসহ তার বন্ধুরা থাকত বান্দরবানের কালাঘাটা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে একটি টিনশেড ঘরে । সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় বলে একটু কম খরচে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে থাকতেন। আর রেবা ত্রিপুরার বাবা-মা পেশায় জুমচাষি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় বান্দরবান সরকারি কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বান্দরবানের একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন। প্রায়ই আসতেন সূর্য্যের বাড়িতে।

বিভীষিকাময় রাতের কথা উল্লেখ করে সূর্য্য পাহাড়বার্তাকে বলেন, রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হওয়ায় বন্ধু রেবাকে বললাম গাছ পড়েছে মনে হয়। রেবা তখন বলল ছোট গাছ। পরক্ষণেই আবার আমরা শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পড়ে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ করে পাহাড়ধসে মাটি আমাদের উপরে এসে পড়ে। আমি গলা পর্যন্ত ডুবে যাই। কোনো মতে মাটি সরিয়ে সামনে থাকা একটা বেঞ্চে ভর করে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করি। তারপর বাইরে গিয়ে সামনের বাড়িওয়ালাদের দরজা ধাক্কা দিলাম। কিন্তু বৃষ্টির শব্দের কারণে হয়তোবা তাদের কানে আমার আওয়াজ পৌঁছায়নি।

NewsDetails_03

সূর্য্য পাহাড়বার্তাকে আরো বলেন, আমি আবার ফিরে গিয়ে সবার পাশ থেকে কাদা সরাতে লাগলাম। তারপর আরও একজন কাদা থেকে উঠে সবাইকে ডাকতে লাগল। তারপর সবাই এসে আস্তে আস্তে উদ্ধার করতে লাগল। তিনি আরও বলেন, রেবা পুরাটাই কাদায় ডুবে যায়। তাকে অনেক খুঁজেও পেলাম না। পরে দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাকে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে। আমার বন্ধু বড়ই ভালো ছিল। বেঁচে নেই আমার বন্ধু।

সূর্য্যের মতো আরেকজন রশেন ত্রিপুরা পাহাড়বার্তাকে বলেন, সারা শরীর কাদায় ডুবে ছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি মারা যাব।

পাশের বাড়ির প্রতিবেশী মনসুর বলেন, ছেলেগুলো অনেক ভালো ছিল। ডাল আর ভাত খেয়ে দিন যাপন করত। ওদের কথা শুনে আমি রাতেই উদ্ধারে নেমে পড়ি। সবাই কাদায় ডুবে আছে। কাদা থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে পারলেও রেবাকে উদ্ধার করতে পারিনি।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে বান্দরবানে কালাঘাটা, লেমুঝিড়ি, আগাপাড়া এলাকায় পৃথক স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে শিশু ও নারীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন