পীর বলেছিলেন, ভোট দেওয়া যাবে না

NewsDetails_01

কয়েকজন নারী ভোটার এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পীরের নিষেধ অমান্য করে তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না।

পীর (ধর্মীয় নেতা) নিষেধ করায় স্বাধীন বাংলাদেশে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি সম্পূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের নারী ভোটাররা।

এলাকার শিক্ষিত ব্যক্তিরা জানান, ১৯৭২ সাল থেকে এখানকার কোনো নারী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। এমনকি রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই নারী ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নাও করতে পারেন।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। এরমধ্যে ১২ হাজার ১১৪ জন নারী ভোটার।

কয়েকজন নারী ভোটার এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পীরের নিষেধ অমান্য করে তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না।

কয়েকজন পুরুষ খোলাখুলিভাবে জানালেন, তাদের স্ত্রীরা চাইলেও তারা ভোট দিতে যাওয়ার অনুমতি দেন না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভোট দিতে না যাওয়া এক নারী বলেন, ‘১৯৭২ সালে পীর হযরত হাসান মওদুদ জাইনপুরী (র.) আমাদের বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ভোটের দিন ঘরের বাইরে গিয়ে ভোট না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।’

NewsDetails_03

ওই এলাকার মুরুব্বিরা ১৯৭২ সালের কথা স্মরণ করে বলেন, ওই সময়ে ডায়রিয়া ও কলেরা নামের দু’টি মরণব্যাধী মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা এটিকে অভিশাপ বলে অভিহিত করে। ওই রোগের প্রভাবে তিন দিনের মধ্যে কয়েকজন মারা যান।

তারা বলেন, তখনই পীরের আগমন ঘটে এবং তিনি স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে তাদের রক্ষা করেন। তখন ওই এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে ওই পীর ভোটসহ যেকোনো বিনোদনের উদ্দেশে এলাকার নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

নারীদের মধ্যে গুজব রয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কয়েকজন শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন নারী পীরের নির্দেশ অমান্য করে ভোট দিতে গেলে দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। এ ছাড়া ভোট দেয়ার পরই ভোটকেন্দ্রে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলেও গুজব রয়েছে।

যে নারী গোষ্ঠীর সঙ্গে ইউএনবি আলাপ করেছে তারা এসব ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্নে পরিষ্কার কোনো জবাব দেয়নি।

রূপসা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কান্দার আলী জানান, এই ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছেন মোট ২৪, ৬৩০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২,০১৫ জন যা মোট ভোটারের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এসময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ওই এলাকার নারী ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলালুদ্দিন খান বলেন, ‘নারী ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন