ফল জিপিএতে, ভর্তি নম্বরে

NewsDetails_01

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে আজ। ফল তৈরি হয়েছে জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) পদ্ধতিতে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করা হবে নম্বরের ভিত্তিতে। এ কারণে ভর্তিতে জটিলতা এড়াতে মেধাক্রম এবং কলেজের আসন সংখ্যা বিবেচনায় রেখে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ১২ মে থেকে উত্তীর্ণদের অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেয়া হবে।

পঞ্চমবারের মতো এবার একাদশে অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন নিয়ে ভর্তি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৪ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কলেজ না পেয়ে হতাশায় ডোবেন। এ নিয়ে নানা সংকট ও জটিলতাও দেখা দেয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ভর্তিতে এই সংকটের প্রধান কারণ আবেদনে বিবেচনাবোধের ঘাটতি। একটি কলেজে যদি ৫০টি আসন থাকে আর সেখানে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা যদি হয় ৫০০, তাহলে বাকিরা স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়বেন।

যে ৪৫০ জন অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পেয়েছেন ৫১তম থেকে তারাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাদ পড়ছেন। ফলে বুঝেশুনে কলেজ পছন্দ করা ও পছন্দক্রমে রাখতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তিতে শিক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দিয়ে মেধাক্রম তৈরি হয়। সফটওয়্যারেও তাই আছে। শিক্ষার্থী যখন অনলাইনে একটি কলেজ পছন্দ করবে, সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার তার মেধাক্রম জানিয়ে দেবে। পাশাপাশি কলেজে বা পছন্দের বিভাগে আসন সংখ্যাও ওয়েবসাইটে থাকবে। আবেদনের সময়ে দুই দিকে নজর দিলে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের বাদ পড়ার কথা নয়।

আবেদনকারী বাছাইয়ে আরও কয়েকটি দিকে নজর দিয়ে থাকে বোর্ডগুলো। তা হচ্ছে- যদি একই সিরিয়ালের আসনের বিপরীতে সমান নম্বরপ্রাপ্ত একাধিক শিক্ষার্থী পাওয়া যায়, তাহলে গণিত, ইংরেজি, বাংলায়- কে বেশি পেয়েছে তা দেখা হবে। এতেও সুরাহা না হলে বিভাগভিত্তিক বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর দেখা হবে। বিষয়টি ভর্তি নীতিমালার ৩ নম্বর ধারায় রয়েছে। জানা গেছে, এ বছর কলেজ পছন্দ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীর মেধাক্রম দেখানো হবে। এতে করে কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাব্যতা সহজেই নিরূপণ করা যাবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ভর্তিতে সংকট সাধারণ চিত্র নয়। গ্রাম-গঞ্জের কলেজে আবেদনকারীর তুলনায় আসন সংখ্যা বেশিই থাকে। এ সমস্যা কেবল বড় কলেজগুলোর ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, সমস্যা এড়াতে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি কাজ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে অবশ্যই ১০টি কলেজ পছন্দ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মেধাক্রম আর ১০টি কলেজের আসনসংখ্যা হিসাবে নিতে হবে। নইলে আবেদনের প্রথম ধাপে সুযোগ মিলবে না।

NewsDetails_03

শিক্ষার্থীরা যাতে কলেজের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে এবার আবেদনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। কেবলমাত্র বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) দিয়েই আবেদন করা যাবে। একটি নম্বরের বিপরীতে একাধিক আবেদন করা যাবে না। মূলত ভুয়া আবেদন ও নিশ্চায়ন বন্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মোট ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ পরীক্ষার্থীর ফল প্রকাশ উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই ফল প্রকাশের ঘোষণা দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে থাকায় এবার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা শিক্ষামন্ত্রীর হাতে ফলাফল তুলে দেবেন। শিক্ষামন্ত্রী ফল প্রকাশের ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা পাবে ১২টা থেকে। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনলাইন ও এসএমএসে ফল পাওয়া যাবে।

যেভাবে ফল জানা যাবে : মোবাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। এছাড়াও www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ফল ডাউনলোড করা যাবে। এবারও পেপারলেস ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলের কোনো হার্ডকপি সরবরাহ করা হবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ডিসি ও ইউএনও’র দফতর থেকে হার্ডকপি সংগ্রহ করা যাবে।

ভর্তি নীতিমালা : ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তি শেষ করে ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা হবে। এবারও কলেজের সব আসনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। কোটার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বাড়তি আসনে। এবারও তিনটি ধাপে নেয়া হবে আবেদন। প্রথম ধাপে আবেদন করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। ফল প্রকাশ ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই ফল প্রকাশ। তৃতীয় ধাপে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ ২৫ জুন। ২৭-৩০ জুন ভর্তি হতে হবে। অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এর জন্য ১২০ টাকা দিতে হবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না। কলেজ পছন্দের ঝক্কি দূর করতে এবার প্রথম ধাপের আবেদনের ফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত আবেদন তালিকায় কলেজের পছন্দক্রম রদবদল করতে পারবে।

কলেজ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন (রেজিস্ট্রেশন) করতে হবে। এর জন্য গত বছর ১৮৫ টাকা নেয়া হতো। এবার ১৯৫ টাকা নেয়া হবে। ভর্তি বিলম্ব ফি ৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকা দিতে হবে। পাঠ বিরতি বা ইয়ার লস শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকার বদলে ১৫০ টাকা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভর্তিসহ অন্যান্য ফি গত বছরের মতোই। কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তিতে কত টাকা নেয়া হবে তা আগেই নোটিশ দিয়ে জানাতে হবে। নীতিমালায় একাদশ শ্রেণীতে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্য সব মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে ৫ হাজার টাকার নেয়া যাবে না। মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুনঃনিরীক্ষা ও ভর্তির আবেদন : কারও ফল পছন্দ না হলে কাল থেকেই এসএমএস করে ফল চ্যালেঞ্জ করা যাবে। ১৩ মে পর্যন্ত এই আবেদন নেয়া হবে। এক মাস পর ফল প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন