ফানুসে রঙ্গিন হবে লামার রাতের আকাশ

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” বা প্রবারণা পুর্নিমা আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে।

‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ মার্মা শব্দ, এর অর্থ উপবাসের সমাপ্তি। অন্য অধিবাসীরা একে “ওয়াহ” বলে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আষাঢী পূনির্মা থেকে আশ্বিনী পূর্নিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষব্রত (উপবাস) থাকার পর ধর্মীয় গুরুদের সম্মানে এ বিশেষ উৎসব পালন করে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসব পালন করেন। তিনদিন ব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী পল্লীগুলো সেজেছে নতুন সাজে। পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে ধুম পড়েছে বেচাকেনার। প্রতি বৌদ্ধ বিহার ও পাড়াগুলোতে সরকারী আর্থিক অনুদানও প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন. উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।

সকালে বিশেষ প্রার্থণার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের প্রথম দিন। পরে ছোয়াইং দানের পর সন্ধ্যায় শুরু হবে ফানুস উড়ানো ও নদীতে জাহাজ ভাসানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে উৎসব শুরু হবে। চীনা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রং,বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এ সময় সূত্রপাত ও কীর্তন হয়, যুবকেরা নৃত্য করেন। বৌদ্ধ ধর্মে ফানুস উড়ানো দেখাও পূণ্যের কাজ। ফানুস বাতি উড়ানোর প্রতিযোগিতা সকলকে আকৃষ্ট করে। বিশাল আকৃতির ফানুস বাতি আকাশে উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক এমনকি বহু বিদেশি পর্যটকও ভীড় থাকে। উৎসবে প্রতিদিন বিকাল থেকে ফানুস উড়ানো শুরু হয়। ফানুস উড়ানোর আগে রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি। এ জন্য স্থানীয় ক্যাং ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে সাজানো হয় বর্নিল সাজে।

NewsDetails_03

শিশু কিশোর ও তরুণ তরুনীরা নতুন পোষাক পরিধান করে এই দিনগুলো পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রবিবার সকাল থেকে বিহার ভান্তের মাঝে ছোয়াইং দানসহ ধর্ম দেশনাসহ দায়ক দায়িকা, তরুণ তরুনীরা সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীতে হাজার হাজার বাতি ভাসিয়ে ও জাহাজ ভাসিয়ে প্রদীপ পুজা করবেন। এছাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত উপাসক উপাসিকাকে তরুণ তরুণীরা ঢোল বাজনা বাজিয়ে গোসলের আয়োজন করবেন।

লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উদ্যাপন কমিটির বাবু মং মার্মা, প্রতিবারের ন্যায় এবারও যথাযথ মর্যাদায় কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারসহ উপজেলার ১৮-২০টি পাড়ার বৌদ্ধ বিহারসহ পাড়ায় ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ উৎসব পালনের জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শনিবার শুরু হয়ে পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার।

উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের ১৮-২০টি পাড়ার কেয়াংগুলোতে পৃথকভাবে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে লামা উপজেলার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও গজালিয়া, রুপসীপাড়া এবং পৌর এলাকার সাবেক বিলছড়ি, ছাগল খাইয়া বৌদ্ধ বিহারে জাঁকজমকভাবে এ উৎসব পালন হবে বলে জানা গেছে। বিহারে বিহারে ভান্তেগণ দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা ও পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার।

এ বিষয়ে লামা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ্ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়গন ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উৎসব যেন নির্বিগ্নে পালন করতে পারেন সেজন্য উপজেলার প্রতিটি কেয়াং বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন