বান্দরবানের রুমা সীমান্তে ৬ দিনে ২০৩ শরণার্থীর অনুপ্রবেশ

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা সীমান্তে শরণার্থী
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বছরের পর বছর ধরে মুসলিম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে আসলেও গত শনিবার থেকে ৬দিনে বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রাংসা সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২০৩জনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা পাহাড়ের তীব্র শীতের মধ্যে সীমান্তের অন্তত ৩টি পাড়ায় খোলা জায়গায় ত্রিপল টেনে তাবুর মতো করে বসবাস করছেন। অন্যদিকে প্রতিদিন তাদের খাদ্য সরবরাহ করছে স্থানীয়রা।
আরো জানা গেছে, রুমা সীমান্তে শরণার্থীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে একটি পর্যক্ষেণ টিম এলাকাটি পরিদর্শন করেছে। সার্বিক পরিস্থিতির খবর নিতে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাকিং বম ও ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার ভান লং বমসহ কয়েকজন জন প্রতিনিধিকে এলাকাটিতে পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তারা ফেরার পর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহন করবে প্রশাসন।
এদিকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বাড়ার কারনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টহল দল রুমা-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বুধবার হেলিকপ্টারে করে সদস্যদের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার পাহাড়ী পথেও বিজিবি ও সেনা সদস্যদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর টিম পাঠানো হয়েছে।
রুমা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই পর্যন্ত শিশুসহ ১৬০জন মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ অনুপ্রবেশ করেছে এলাকাটিতে। তবে দেশের ২য় সর্বোচ্ছ শৃঙ্গ কেউক্রাডং থেকে উক্ত এলাকায় পায়ে হেটে পৌছাতে অন্তত ১দিন সময় লাগার কারনে এখনো পর্যন্ত সেখানে সরকারী ভাবে কোন খাদ্য বা ত্রান সহায়তা পৌছানো সম্ভব হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ফলে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা কোন ভাবে সেখানে অবস্থান করছে।
গত শনিবার মিয়ানমারের চীন রাজ্য থেকে ১৬৩ জন বৌদ্ধ শরণার্থী বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চাইক্ষাং সীমান্তের শূন্যরেখায় (নোম্যান্স ল্যান্ড) অবস্থান নেয়ার পর তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বুধবার আরো ৪০ পরিবার সেখানে অনুপ্রবেশ করার কারনে এ নিয়ে অনুপ্রবেশের সংখ্যা দাড়ায় ২০৩জনে।
গত ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন ও চীন রাজ্যে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের পর আতংকে খুমি, খেয়াং, বম ও রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত পথে বান্দরবান দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে।
এই ব্যাপারে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাসসুল আলম বলেন, এখানে বিজিবি ও সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে, তারা পর্যবেক্ষন করে ফিরলেই আমরা পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জানুয়ারি দেশটির স্বাধীনতা দিবসের ভোরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা। তাদের হামলায় মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিজিপির ১৩ সদস্য নিহত হন। আরাকান আর্মির দাবি করে, ওই হামলায় তাদেরও দুই সদস্য নিহত হয়।

আরও পড়ুন