বান্দরবানে এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ৮০ জন

বেশি লামা উপজেলায়

NewsDetails_01

পারিবারিক বিরোধ, স্বামী স্ত্রী’র মনমালিন্য, ভুল বুঝাবুঝি কিংবা মান অভিমান নিয়ে অনেকে অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যা। আর আত্মহত্যার ঘটনা বান্দরবানে ঘটছে অহরহ। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা জেলার লামা উপজেলায়, যাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বান্দরবানে অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিষের সহজলভ্যতা, অর্থনৈতিক, প্রেম ঘটিত, ভুল বুঝাবুঝি এবং পারিবারিক অশান্তি, পরকিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে দেখা যায়, বান্দরবান জেলার মধ্যে ২০২১ সালের শুরুর দিক থেকেই লামা উপজেলায় অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করেছেন পাহাড়বার্তা’র গবেষণা সেল এর প্রধান সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা।

পাহাড় বার্তা’র গবেষণা সেল এর তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০২১ সালে ৮০ জন আত্মহত্যার করেছে। তারমধ্যে লামা উপজেলা ২৬ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি ১৯ জন, বান্দরবান সদরে ১২ জন, রোয়াংছড়ি ৬ জন, আলীকদম ৬ জন ও থানচি ৬ জন এবং রুমা উপজেলায় ৫ জন আত্মহত্যা করেছে।

লামা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী বলেন, লামা উপজেলা একটি জনবহুল উপজেলা। যার কারণে বান্দরবানের মধ্যে এখানে বিভিন্ন সমস্যা ঘটে থাকে। আত্মহত্যা কারণসমূহ মধ্যে তামাক চাষ অন্যতম কারণ হতে পারে। পাশাপাশি নেশাগ্রস্ত, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব।

তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যা পিছনে কি কি কারণ রয়েছে সেটি বের করতে একটি বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। যেটি বান্দরবানে নেই। গবেষণা সেল না থাকায় নিত্য নতুন কারণগুলো বের করা যাচ্ছে না।

NewsDetails_03

বিষণ্নতায় যারা ভোগেন, তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। কারণ জীবন নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড নেতিবাচক ধারণা কাজ করে। ছেলেবেলা থেকে যাদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে।’

এক গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের দুই-তৃতীয়াংশই নিজেদের ইচ্ছা সম্পর্কে আগেই অন্যের কাছে (বন্ধু-বান্ধব) কম-বেশি তথ্য দেয়। সেসব তথ্য গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অনেকে মনে করছে, পরিবার ও পরিবারের নিকটজন যদি একটু সচেতন হয় তাহলে আত্মহত্যা অনেকাংশে কমে যেতে পারে, আর তাতে বাঁচবে বহু প্রাণ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন এত আত্মহত্যা করছে? বা কেন এই আত্মহত্যার প্রবণতা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।’ কিন্তু আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আকুল হয়ে বলেছিলেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যেতে অনেকেই তাড়াহুড়া করেন, করেন আত্মহত্যা।

এই ব্যাপারে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষ সহজলভ্য হওয়াতে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আত্মহত্যাকারীদের অধিকাংশ ১৬-৩০ বছর বয়সে থাকা মানুষদের মধ্যে। দরিদ্রতা, অতিরিক্ত আবেগ, সচেতনতা না হওয়ার কারণে এমন হচ্ছে।

আরও পড়ুন