বান্দরবানে এবারও হবেনা ১৪৫তম রাজপূণ্যাহ

NewsDetails_01

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের উৎসব রাজ পূণ্যাহ মেলা প্রতিবছর ডিসেম্বরে আয়োজন করা হলেও টানা ৩য়বারের মতো এ বছরও ১৪৫তম রাজপূণ্যাহ’র আয়োজন হবেনা বলে জানিয়েছে রাজ পরিবার।

বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের স্থানীয় রাজার মাঠে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ৩ দিনব্যাপি রাজ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে, কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রামন আর এবার বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযান ও অস্থিতিশীল আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কারনে এবারও রাজপূণ্যাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা।

প্রতিবছর মেলাকে ঘিরে জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলা পরিণত হয়, পর্যটকসহ দেশি- বিদেশী লক্ষাধিক মানুষ ভীর জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা হিসাবে বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে পাহাড়ীরা রাজ দরবারে এসে ভীর জমান।

বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ৩ জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।

NewsDetails_03

বান্দরবান শহরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, টানা তিন বছর রাজপূণ্যার আয়োজন না করার কারনে জেলার মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ভুলতে বসেছে, এই ঐতিহ্য সবার ধরে রাখা উচিত।

আরো জানা গেছে, বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।

গত ২০ অক্টোবর জেলার রোয়াংছড়ি ও রাঙামাটি বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ার দূর্গম এলাকায় যৌথ বাহিনীর ১০ দিনের অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭জন ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ৩জনসহ মোট ১০ সদস্য কে বিপুল পরিমান অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরাঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ও ১টি আস্তানা ধ্বংস করা হয়। জেলার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই দুই উপজেলা ব্যতিথ অন্য ৫টি উপজেলায় পর্যটক যাতায়াতে বাধা নেই। প্রতিবছর শীত মৌসুম ও রাজ পূণ্যাহ মেলাকে কেন্দ্র করে জেলায় হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটলেও এবার দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় দেশি বিদেশী পর্যটকের আগমন কমে গেছে।

বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী’র সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং বলেন, যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযান, জেলার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা মহোদয়।

আরও পড়ুন