বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্যসহ শারক্বীয়ার ১৭ জঙ্গি গ্রেপ্তার

বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

NewsDetails_01

বান্দরবানের থানচি উপজেলার লোয়াংমুয়াল রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় টানা ১২ ঘন্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুদর্ষ ১৭ জঙ্গি ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ এর ৩ সদস্য। এসময় র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ফলে সব মিলিয়ে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার বান্দরবানের র‌্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন তাঁদের আটকের বিষয়ে জানান।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুমিল্লা সদরের মোঃ আসসামী রহমান সাদ (১৯), বরগুনা বেতাগী এলাকার মোঃ সোহেল মোল্লা সাইফুল্লাহ (২২), পটুয়াখালী সদরের মোঃ আল আমিন ফকির মোস্তাক (১৯), কুমিল্লা লাঙ্গলকোট এলাকার মোঃ জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক (২৭), পটুয়াখালী সদরের মোঃ মিরাজ হোসেন ওরফে দোলন, মুন্সিগঞ্চ টঙ্গীবাড়ির রিয়াজ শেখ জায়েদ (২৪), পটুয়াখালী মহিপুরের মোঃ ওবাইদুল্লাহ (২০), পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের জুয়েল মাহমুদ (২৭), টাঙ্গাইল ধানবাড়ীর মোঃ ইলিয়াছ রহমান (৩২), ঝালকাঠি সদরের মোঃ হাবিবুর রহমান (২৩), কুমিল্লা সদরের মোঃ সাখাওয়াত হোসেইন ওরফে মাবরুর (২১), বরিশাল কোতয়ালীর মোঃ আব্দুস সালাম রাকি ওরফে দুমচুক রাসেল (২৮), কুমিল্লা লাকসামের যোবায়ের আহমদ (২৯), পটুয়াখালীর মোঃ শামীম হোসেন (২৬), হবিগঞ্জ জেলার তাওয়াবুর রহমান সোহান (২০), বরিশালের মাহমুদ ডাকুয়া (২০), মাগুরার মোহাম্মদ আবু হুরাইরা (২২),

NewsDetails_03

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, তথাকথিত হিজরতের নামে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়া নিখোঁজ ৫৫ জন তরুনের মধ্যে ২৭ জনকে আইনের আওতায় আসতে সক্ষম হয়েছে। আরও ২৮ জনের খোঁজে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে। যারা অর্থের বিনিময়ের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতায় পাহাড়ে জঙ্গী সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নগদ সাত লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, যা দিয়ে অবৈধ পথে অস্ত্র কেনার জন্য জমা করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এ পর্যন্ত প্রথম দফায় ৫ জন, দ্বিতীয় দফায় ১০ জন, তৃতীয় দফায় ২ জন মোট ১৭ জন জঙ্গী এবং তিন দফায় ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএনএফের সদস্য সংখ্যা ২শ জন।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় র‌্যাব সাড়ে তিনশ গুলি করেছে, সন্ত্রাসীরা দুইশ রাউন্ডের মত গুলি ছুড়েছে। আহত আটজন র‌্যাব সদস্যরা গুলিবিদ্ধ হলেও মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত কেউ হয়নি। তারা সবাই ঝুঁকিমুক্ত এবং চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-খন্ড নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে (কেএনএফ) পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদিম নিবাস, ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়, ফলে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। বিভিন্ন মহল তাদের ভূমিতে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। জেএসএস’সহ অন্য সংগঠন গুলো কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম সহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে, তাই এসব থেকে মুক্তি পেতে ২০২০ সাল থেকে নাথান বম এর নেতৃত্বে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি বম সম্প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলে। পরবর্তীতে তাদের আশ্রয়ে শসস্ত্র প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় সমতল থেকে আসা নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার বেশ কিছু সদস্য। তাদের নির্মূলে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। গত ২৯ জানুয়ারি বান্দরবানের রুমার আরথাহ পাড়া ও বাচলং পাড়ার মাঝামাঝি স্থানে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক সদস্য বেনেট ম্রো নিহত হয়।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় জারি আছে, ফলে জেলায় পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে।

আরও পড়ুন