বান্দরবানে ভূমি অফিসের নামে একাধিক জায়গা দখল

NewsDetails_01

বান্দরবান সদরে ভূমি অফিস নির্মানের নামে একাধিক স্থানে একাধিক জায়গা দখলের নজির গড়েছে সদর উপজেলা ভূমি অফিস।

পাহাড়বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবান শহরের পার্বত্য জেলা পরিষদের আগে প্লাজা কনভেনশন সেন্টারের পাশে দীর্ঘ ১২ বছর আগে ভূমি অফিসের জন্য প্রস্তাবিত হিসাবে ভূমি নির্ধারণ করে সাইন বোর্ড দিয়ে দেওয়া হয়, যা এখনও দৃশ্যমান। উক্ত সাইনবোর্ডে লেখা আছে, সদর উপজেলা ভূমি অফিসের জন্য প্রস্তাবিত জমি, তফসিল ৩১৩ নং বান্দরবান মৌজা। দাগ নং ১৭৭৪। জমির পরিমান ১.৫০ একর।

আরো জানা গেছে, বান্দরবান ভূমি অফিসে বান্দরবান সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হিসাবে তাসনীন জাহান যোগদানের পর বান্দরবান শহরের ভূমি ব্যবসায়ি, ভূমি দস্যু নামে পরিচিত সুনিল কান্তি দাশ ওরফে সোনা’র সন্তান, সদর উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত জারিকারক সন্তোষ দাশ এর পরামর্শে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা দখল করে ভূমি অফিসের জন্য নির্ধারিত স্থান উল্ল্যেখ করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। আর দীর্ঘ ১২ বছর আগে ভূমি অফিসের জন্য নির্ধারিত স্থানের জায়গা ব্যাতি রেখে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ফের ভূমি অফিসের জন্য প্রস্তাবিত জমি উল্ল্যেখ করে জায়গা দখল করায় প্রশ্ন উঠেছে, বান্দরবান সদরের কয়টি জায়গায়, কয়টি ভূমি অফিস নির্মান হবে।

শুধু তাই নয়, বান্দরবান শহরের মেঘলাস্থ স্বপ্ন বিলাস হোটেলের পাশের ১৬৯ হোল্ডিং এর জায়গাটি খাস দেখিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা তাসনীন জাহান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮১ সালে ৩ ডি সেট মৌজা মূলে জেলা সদরের ৩১৩ নং মৌজায় সরকারী কর্মচারী সৈয়দ মোজাফরকে ৫০ শতক জায়গা বন্দোবস্তি প্রদান করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এর ধারাবাহিকতায় বান্দরবানের তৎকালীন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেন স্বাক্ষরিত খতিয়ান মূলে জানা যায়, ১৬৯ হোল্ডিং এর বন্দোবস্তি প্রাপ্ত সেই জায়গার মালিক মোজাফর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মোস্তফা মিনহাজকে ৪০ শতক ও সদর উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত জারিকারক সন্তোষ দাশ’কে ১০ শতক জায়গা বিক্রি করেন।

NewsDetails_03

এই ব্যাপারে মেঘলা এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, মেঘলা এলাকার প্লাজা কনভেনশন সেন্টারের পাশে বছরের পর বছর ধরে ভূমি অফিসের একটি সাইনবোর্ড দেখে আসছি, এখন নতুন করে অন্য জায়গায় ফের সাইনবোর্ড। সরকার বান্দরবান সদরে কয়টি ভূমি অফিস করবে?

আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট মোস্তফা মিনহাজ তার নামীয় ৪০ শতক জায়গা থেকে কামাল হোসেন ও মো: জসিমকে ১০ শতক করে ২০ শতক জায়গা বিক্রি করেন। হোল্ডিং এর সিরিয়াল অনুসারে প্রথমে আবু ছাফা ১৬৮ হোল্ডিং, দ্বিতীয়’তে সৈয়দ মোজাফর ১৬৯ হোল্ডিং ও তৃতীয়’তে আইয়ুব চৌধুরীর ১৭০ হোল্ডিং ঠিক থাকলেও ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ মোজাফর এর মধ্যবর্তী ১৬৯ হোল্ডিং এর জায়গাটি খাস দেখিয়ে গত ২ মার্চ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা তাসনীন জাহান খাস খতিয়ান ভুক্ত জায়গা দাবি করে উপজেলা ‘ভূমি অফিসের জন্য নির্ধারিত স্থান’ উল্ল্যেখ করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন।

বান্দরবান শহরের মেঘলাস্থ স্বপ্ন বিলাস হোটেলের পাশের ১৬৯ হোল্ডিং এর ব্যাক্তি মালিকানাধীন আরেকটি জায়গা খাস দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা তাসনীন জাহান। ছবি-পাহাড়বার্তা

১৬৯ হোল্ডিং এর জায়গার বর্তমানে ২০ শতক জায়গার মালিক মোস্তফা মিনহাজ বলেন, ভূমি অফিস যেভাবে আমাদের জায়গা দখল করছে, এর বিচার কে করবে?

আরো জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি উক্ত জায়গা পরিমাপ করে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মোস্তফা মিনহাজ জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি এর কাজে একটি আবেদন করলেও সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কানুগো মো: দিদারুল আলম ও সার্ভেয়ার সুনিল রঞ্জন চাকমা’র যোগসাজসে ভূমি কর্মকর্তা আইন বহির্ভূত ভূমি দখলের কাজটি সম্পাদন করেন।

১৬৯ হোল্ডিং এর অপর ১০ শতক জায়গার মালিক মো: জসিম বলেন, নোটিশ না দিয়ে একজন ভূমি কর্মকর্তা একটি জায়গাকে কিভাবে খাস জমি দাবি করে, দখল করতে পারে? তিনি আরো বলেন, আমার ১০ শতক ও কামাল হোসেনের ১০ শতকসহ মোট ২০ শতক জায়গা সাদেক হোসেন চৌধুরীকে বিক্রি করেছি, এর বায়নানামাও সম্পাদন হয়েছে।

আরো জানা গেছে, সরকারী নিয়ম অনুসারে যে কোন ভূমি পরিমাপের সময় উক্ত ভূমির আশেপাশের জায়গার মালিকদের উপস্থিত থাকার জন্য পূর্বে নোটিশ প্রদানের নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে ভূমি কর্মকর্তা কাউকে অফিসিয়ালি নোটিশ প্রদান না করেই উক্ত জায়গা একাধিকবার পরিমাপ করে এবং খাস জায়গা দাবি করে ভূমি অফিসের জন্য নির্ধারিত স্থান এর সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন।

এই ব্যাপারে বান্দরবান সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাসনীন জাহান ভূমি অফিসের জন্য দুই ভূমির দুই স্থানে ভূমি অফিসের সাইনবোর্ড থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আগের সাইনবোর্ড আমাদের আগের কর্মকর্তা প্রস্তাব করেছিলেন। ভূমি অফিস করার জন্য জায়গা প্রয়োজন, তাই অন্য জায়গায় সাইনবোর্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন