রাঙামাটিতে সন্তান নিয়ে শ্বশুর দেবরের নির্যাতনের মুখে নুর বেগম !

স্বামী মরেছে প্রবাসে

NewsDetails_01

নিজের এবং প‌রিবারের সুখের জন্য ধার দেনা করে প্রবাসী বন্ধুদের সহযোগিতায় লন্ডন পা‌ড়ি দিয়েছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা হযরত আলী নিক্সন। কিন্তু দেশে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে, নিজের সৎ ভাই, সৎ মার প্র‌তি‌নিয়ত অপমান, লাঞ্চনা ও অকথ্য নির্যা‌তনে নিক্সনের স্ত্রী ও সন্তানদের জীবন হয়ে উঠেছিলো যন্ত্রনাময় নরক। ফলে, বিদেশে মা‌ন‌সিক যন্ত্রনায় দ্বগ্ধ হতে হতে মারা যান নিক্সন। করোনায় বিশ্বময় যোগাযোগহীনতা ও আর্থিক অনটনে নিক্সনকে বিদেশের মা‌টিতে সমা‌হিত করা হয়।
এদিকে, নিক্সনের মৃত্যুর পর প্রাপ্ত সম্প‌ত্তি থে‌কে বঞ্চিত করতে দেশে তার স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর নেমে আসে অমানু‌ষিক নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা শুধু নিক্সনের প‌রিবারের ওপরই নয়, নিজ বাবা আব্দুল হালিমের প্রশ্রয়ে সৎ মা ও ভাইয়ের যোগসাজসে ‌নির্যাতন চলছে নিজের আপন বোনদের ওপরও।

আজ শ‌নিবার (৬ জুন) রাঙামা‌টি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে অ‌ধিকার আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে বিচার চাওয়া হযরত আলী নিক্সনের প‌রিবার ও নি‌জের বোন এই মর্মস্পর্শী ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।

‌লি‌খিত বক্তব্যে লন্ডন প্রবাসী মরহুম হযরত আলী নিক্সনের স্ত্রী নুর বেগম ব‌লেন, আমার শ্বশুর আব্দুল হালিম গত শুক্রবার আমার মৃত স্বামী এবং আমার পরিবারকে প্রাপ্ত সম্প‌ত্তি থে‌কে ব‌ঞ্চিত করা ও সামা‌জিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কৌশলে মিথ্যা বানোয়াট কাল্পনিক অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

তিনি আমার শ্বশুর হ‌লেও মূলত ধর্মীয় লেবাস ধারী একজন ঠক মিথ্যাবাদী, লোভী, অসামাজিক ব্যক্তি হিসেবে এলাকা ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে পরিচিত। আমার শ্বশুরের ১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ১ম প‌ক্ষে তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় প‌ক্ষে এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ে করার পর তার চরিত্র আরো অধঃপতন হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলের যোগসাজশে সব সম্পত্তি ভোগ করার জন্য আমাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে আসছে।

নুর বেগম বলেন, মূলত আমার শ্বশুর দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আমাদের জীবনে অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে। আমার সৎ শাশুড়ি আমাদের দুইজন কাজের লোককে বিদায় করে দিয়ে আমি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম আমাকে দিয়ে ঘরের যাবতীয় কাজ করাতেন এবং শশুরের সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য আমাদের উপর প্রতিদিন মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এক পর্যায়ে আমার সৎ শাশুড়ির কথায় প্রভাবিত হয়ে আমার শ্বশুর আমাদেরকে আলাদা করে দেন। তারপর আমার স্বামী অনেক কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।

এরপর ২০০১ সালে আমার স্বামী হঠাৎ জানতে পারেন যে আমার শ্বশুর গোপনে তার সম্পদের বেশ কিছু অংশ প্রথম পক্ষের তিন সন্তান কে বঞ্চিত করে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে দানপত্র করার আবেদন করেছেন। তখন আমার স্বামী ও তার দুই বোন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আদালতের শরণাপন্ন হয়ে সিভিলস্যুট মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালীন সময় আমার শ্বশুর নিজের ভুল বুঝতে পেরে গেছি মীমাংসার উদ্দেশ্যে একটি সম্পত্তি বন্টনসহ ইচ্ছাপত্র সম্পাদন করে দেন এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।

NewsDetails_03

উক্ত আপোষনামা সন্তুষ্ট হয় উভয়পক্ষের ওয়ারিশগণ সাক্ষীগণের সামনে স্বাক্ষর করেন এবং উক্ত আপোষনামা আদালতে দাখিল করে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলে উক্ত আপোষনামা মূলে উভয় পক্ষকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ প্রদান করে মাননীয় আদালত আমার শ্বশুরের দানপত্র করার আবেদন বাতিল ঘোষণা করেন।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি,আমার শ্বশুর উক্ত আপোষনামা ভঙ্গ করে ও মহামান্য আদালতের রায় অমান্য করে গোপনে মিউট মামলা মূলে প্রথম স্ত্রীর পিতা হতে প্রাপ্ত দোকানটি দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে অন্যায় ভাবে দানপত্র করে দেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় আমার শ্বশুরের না‌মে অবশিষ্ট সম্পদের প্রায় অর্ধেক অংশ মিউটেশন মামলা মূলে আমার সৎ শাশুড়ি ও তার গর্ভের দুই সন্তানকে দানপত্র করে দেন। উক্ত দানপত্রে আমার শ্বশুর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে অবশিষ্ট অর্ধেক সম্পত্তি তার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে হযরত আলী ও দুই মেয়ে পাবেন। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় আমার শ্বশুর চূড়ান্তভাবে বাজার পিটিশন মামলা মূলে তার প্রথম পক্ষের তিন সন্তান এর জন্য রক্ষিত অবশিষ্ট অংশটিও আমার সৎ শাশুড়িকে দানপত্র করিয়ে দেন।

এমন প্রতারণামূলক বিষয় জানতে পেরে আমার স্বামীসহ সন্তানরা মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমার স্বামীর বড় বোন মানসিক চাপ ও কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমার স্বামী বিদেশে অবস্থান করায় জীবিত একমাত্র বোন আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলতে গেলে আমার সৎ দেবর আব্দুল্লাহ আল আব্দুল্লাহ আল হামদান আমার শাশুড়ি ও শ্বশুর তাকে প্রচণ্ড মারধর করে আহত করেন।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে নির্যাতিতা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে সৎ ভাই, সৎ মা ও পিতার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলাটি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আমার স্বামীর মেঝ কোন এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন। আমি সাক্ষী হওয়ার কারণে আমার সৎ দেবর আমাকে শ্লীতাহানীর চেষ্টা করেন। এমতাবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে আমার সৎ দেবর আব্দুল্লাহ আল হামদান এর বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হই।

এদিকে, পৌর মেয়রসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি কে তাদের প্রতারণার বিষয়ে অবহিত করা হলে আমাকে ও আমার স্বামী, এমনকি আমার স্বামী মাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর কিছু‌দিনের ম‌ধ্যে বিদেশে অবস্থানরত আমার স্বামী এসকল কথা শুনে প্রচন্ড মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা তার শেষ চেহারাটুকু দেখ‌তে পাই‌নি। পিতা ও সৎ ভাইয়ের দেয়া মানসিক আঘাতে আমার স্বামীর অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে শরণাপন্ন হই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছে।

বর্তমানে মেয়েদের নিয়ে আর্থিক, মানসিক ও জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় ভোগা নুর বেগম ন্যায় বিচারের স্বার্থে জীবনের নিরাপত্তা, অধিকার ও সম্মানের জন্য একজন নির্যা‌তিতা নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্ত‌ক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সন্মেলনে নুর বেগম ছাড়াও তার মেয়ে, মরহুম হযরত আলী নিক্সনের মেঝ বোন, বোন জামাই ও অন্যান্য আত্বীয় স্বজন উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

আরও পড়ুন