রাঙামাটির নানিয়ারচরের পরিস্থিতি এখনও থমথমে

NewsDetails_01

রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের নেতাকর্মীসহ ৬ হত্যাকান্ডের পর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর সাড়াঁশি অভিযান চালাচ্ছে। নানিয়ারচরে পর পর দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। নানিয়ারচরের একমাত্র সড়ক পথ রাঙামাটি মহালছড়ি খাগড়াছড়ি সড়কে ভাড়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নানিয়ারচরে সেনা ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। নানিয়ারচরে দোকানপাট খোলা থাকলেও মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। নানিয়ারচরের একমাত্র সড়ক পথ রাঙামাটি মহালছড়ি খাগড়াছড়ি সড়কে ভাড়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, পুলিশের দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, রাঙামাটির বাহির থেকে, দুইশ এপিবিএন ও আড়াইশ অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্সসহ বাড়ত্তি নিরপাত্তার জন্য আনা হয়েছে।
নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, নানিয়ারচরের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এর পাশাপশি নিরাপত্তাও ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি:-
এদিকে,ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামধারী সন্ত্রাসী নব্য মুখোশ বাহিনীকে ভেঙে দেয়ার দাবি জািনয়েছেন নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি। নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব পরান ধন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির আহব্বায়ক ও নানিয়াচর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা দেয়া এক বিবৃতিতে জানান, রাঙামাটির নানিয়াচরের বেতছড়িতে নব্য মুখোশ বাহিনীর প্রধান ও বিভিন্ন খুন ও অপহরণ মামলার পলাতক আসামী তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা নিহত হওয়ার পর তার এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে পুনর্গঠন করে দিয়ে শাসক গোষ্ঠী জনগণের প্রতি নতুন একটি অশুভ বার্তা দিয়েছে বলে বিবৃতিতে তিনি মন্তব্য করেন।
পুনর্গঠিত নব্য মুখোশ বাহিনীর সর্দারদের সবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নমুবা’র সদ্য প্রধান শ্যামল কান্তি চাকমা হলেন একজন অস্ত্র চোরা কারবারী, গত বছর সন্ত্রাসী বাহিনীটি গঠনের কয়েক দিন পূর্বে তিনি অস্ত্রসহ হাতে নাতে ধরা পড়ে উপরের নির্দেশে ছাড়া পেয়েছিলেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্¦ল কান্তি চাকমা ওরফে দাজ্যা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণের সাথে জড়িত। এছাড়া তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারী মামলা রয়েছে।’
একটি সংগঠন বা দল যে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠন করা হয় নব্য মুখোশ বাহিনীর গঠন বা পুনর্গঠন সেভাবে হয়নি মন্তব্য করে জ্যোতি লাল চাকমা অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘আমাদের তথ্য মতে একটি বিশেষ মহলের নির্দেশে সংস্কারবাদী নামে পরিচিত জেএসএস এম. এন. লারমা দলের এক শীর্ষ নেতা নব্য মুখোশ বাহিনী ‘পুনর্গঠনের’ কাজটি করে দিয়েছেন। কোন সম্মেলন বা মিটিং করে এই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়নি। শুধু কিছু নাম লিস্ট করে পত্রিকায় বিবৃতি দেয়া হয়েছে।’
একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে দমন বা দুর্বল করা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বিশেষ মহল নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের গুটি হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক খেলা খেলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং অবিলম্বে এই জঘন্য ও রক্তপাতময় খেলা বন্ধ করার দাবি জানান।
অপরদিকে,উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা)সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে বৃহস্পতিবার সকালে গুলি করে হত্যা এবং শুক্রবার দুপুরে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য নানিয়ারচর যাওয়ার পথে গনতান্ত্রিক ইউপিডিএফের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় সেমাবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৪ মে) দুপুরে রাঙামাটির নানিয়ারচরের বেতছড়ির কেংক্রাছড়ি নামক স্থানে দুর্বৃত্তদের গুলিবর্ষনে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের আহবায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা ও মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদারসহ ৫ জন নিহত ও ৮জন আহত হয়েছিলো। এরা সকলেই বৃহস্পতিবার দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এড. শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন