রাঙামাটি ট্রাজেডি : “পুত তোরা কনডে,আরে ছাড়ি কনডে গেলি”

NewsDetails_01

রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই লেকে ধসে পড়া ভবনে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ছবি- বিজয় ধর
রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই লেকে ধসে পড়া ভবনে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ছবি- বিজয় ধর
রফিক আত্মহারা কন্ঠে বলতে লাগলেন ও “পুত তোরা কনডে, তোরা আরে ছাড়ি কনডে গেলি …কান্না শুধুই কান্না………”। রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে ভবন ধসে দুই সন্তানকে হারিয়ে বিলাপ করছিল বাবা হাফেজ রফিক।
দীর্ঘদিন দুবাই প্রবাসে থাকার পর দেশে এসে মধ্যবয়সী হাফেজ রফিক একটি তেলের দোকান নিয়ে তার ফুটফুটে দু’টি শিশুকে নিয়ে স্বপ্নের ভুবন তৈরি করতে লাগলেন কিন্তু তার স্বপ্লের ভূবন তৈরীর স্বপ্ন লেকের জলে বিলীন হয়ে গেল। বাচ্চারা চলে গেল না ফেরার দেশে।
সাজিল ও সামাদ দুই সহোদর ও এ মর্মান্তিক ঘটনার স্বীকার। স্কুল প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী এ দুজনে বয়সের তুলনায় অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী। মাত্র ছয় এবং সাড়ে তিন বছর বয়সে মা-বাবার বুক খালি করে ঠাঁই নিতে হলো কবরে। এ দুজনেও রাঙামাটি মডেল কেজি স্কুলে ছাত্র ছিল। অপরদিকে দু’শিশু হারিয়ে উন্মাদ হয়ে গেছে হাফেজ রফিকুল ইসলাম।
রফিকের স্ত্রী এবং সাজিল ও সামাদ এর মা শেফা খানম জ্ঞান হারিয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি নিজেও সেই ভবন ধসের মৃত্যুপুরী থেকে বেরিয়ে আসেন। অতি আদরের দুই সন্তানকে হারিয়ে কথা বলার পরিস্থিতি ছিলো না তার।
রফিকের পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী সুজন ও শামীম জানান, রফিক তার সন্তানদের তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসলে আমাদের বলতেন “এরা আমার রাজা”। এদের দিয়ে আমি রাজ্য শাসন করবো কিন্তু রফিকের রাজ্য শাসন হলো না।
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন কাপ্তাই লেক ঘেষে গড়ে উঠা দোতলা ভবন পানিতে ডুবে যাওয়ায় পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ঘটনায় এক পরিবারের দুই ছেলে, আরেক পরিবারের বাবা ও মেয়ে এবং একই এলাকার বাসিন্দা টিউশনী করতে আসা এক কলেজ ছাত্রীর অকাল মৃত্যু হয়।
এদিকে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই লেকে ভবন ধসে ৫জন নিহত এবং আহত হবার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এক শোক বিবৃতিতে তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

আরও পড়ুন