রুমায় জমজমাট অপহরণ বাণিজ্য : অর্থের জন্য ফোন করছে কারা ?

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পাড়া প্রধান কারবারী ও বোট ড্রাইভারসহ ৩ জনের মুক্তিপণ হিসেবে ৮ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে এমএলপি নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৭মে) সকালে ও বিকালে গত আটদিন ধরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্ত্রী ও আত্মীয়ের কাছে মুঠোফোনে আলাদা-আলাদা করে তাদের মুক্তিপণের জন্য এসব চাঁদার দাবি করা হয়। আর এনিয়ে পাহাড়বার্তা‘র বিশেষ প্রতিনিধি (রুমা) বান্দরবান এর শৈহ্লা চিং মার্মা‘র প্রতিবেদন।

নিখোঁজদ্বয়ের স্ত্রী প্রুমুইচিং ও ওয়াংমাপ্রু মারমা পাহাড়বার্তা’কে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩০এপ্রিল) বিকালে অংসাচিং মারমা তার পরিচিত কৈক্ষ্যংঝিরি এলাকা থেকে তিন জন যাত্রী নিয়ে রিঝুক ঝর্নার পাশে একটি পাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বোট ড্রাইভার থুই নুমং মারমাকে মুঠোফোনে বলা হয়। পরে ড্রাইভার থুইনুমং বাজার থেকে কেনা পরিবারের খাদ্য সামগ্রী ও তার জিনিসপত্র তঙমক পাড়া ঘাটের যাত্রী ছাউনিতে রেখে অংসাচিং এর কথানুসারে কক্ষ্যংঝিরি বাজার ঘাট থেকে ওই তিন যাত্রীকে নিয়ে যায় রিঝুক ঝর্নার পাশে একটি পাড়ার দিকে। ওই সময় বোট ড্রাইভার থুইনমং মারমা তার সাথে বোটের সহকারি হিসেবে একই তংমক পাড়ার বাসিন্দা অংথুচিঙকে ডেকে নিয়ে যায়।

যাত্রীদের নিয়ে যেতে মুঠোফোনে কথা বলা অংসাচিং মারমা আগে রুমার তংমক পাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও বর্তমানে সে উপজেলার খক্ষ্যংজিরি বাজারে বসবাস করছে। পাইন্দু ইউনিয়নের তংমক পাড়ার বাসিন্দা বোটচালক থুইনুমং মারমা (৩৬) ও অংথুইচিং মারমা (৩৮) গত ৩০এপ্রিল থেকে এখনো এই দুজন নিখোঁজ রয়েছে।

এদিকে নিখোঁজ বোট ড্রাইভার থুইনুমং মারমার বড়ভাই থুইহ্লাচিং মারমা পাহাড়বার্তা’কে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (৭মে) বিকেল চারটার বিশ মিনিট নাগাদ তার মুঠোফোনে বোট ড্রাইভার মোবাইল নাম্বার থেকে কল আসে। সে সময় বলা হয় – তোর ভাই বেঁচে আছে, বাঁচাতে চাইলে এ নাম্বারে কল দাও, একথা বলে একটি রবি নাম্বার দেয়।

বিশ মিনিট পর অর্থাৎ ৪ঃ৪০ মিনিটে রবি একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল দিয়ে জানতে চায়- থুইনুমংয়ের বড়ভাই কিনা? হ্যাঁ, সাড়া দিলে তোর ভাই বেঁচে আছে। আবার বলে দেয় যে, তোর ভাইকে বাঁচাতে চাইলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। তবে কখন কোথায় গিয়ে দিতে হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি।

NewsDetails_03

এদিকে গত বুধবার দুপুরে রুমা সদর ইউনিয়নের রিজুক পাড়া কারবারী (পাড়া প্রধান) প্রুসানু মারমা(৪২) জুমে গেলে সে অপহৃত হন। অপহরণকারিরা মগ লেবারেশন পার্টি (এমএনপি) বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (৭মে) সকালে অপহৃত পাড়া কারবারী স্ত্রীকে মারমা ভাষায় মুঠোফোনে কল করে জানায়, তোমার স্বামীকে চাইলে মুক্তিপণ হিসেবে ছয় লাখ টাকা দিতে হবে। তোমার স্বামী তংমক পাড়া এলাকাতে আছে বলে জানিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

পাড়াবাসীর উদ্ধৃতি দিয়ে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, তার পাইন্দু ইউনিয়নের তংমক পাড়ার নিখোঁজ হওয়াদের সন্ধানে কয়েকটি নৌকায় ২০ থেকে ৪০ জন করে পাড়াবাসী রিজুক ঝর্নার উপরে বিভিন্ন সম্ভাব্যস্থানে যান গত তিন চার দিন ধরে।

গত বুধবার (৬মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পান্তলা এলাকায় পৌঁছলে নাইতং পাহাড় রাস্তা থেকে তাদের লক্ষ্য করে ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তখন তারা আতঙ্কিত হয়ে ফিরে আসছিল

রুমা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী বলেন, দুটি ঘটনায় নিখোঁজ বা অপহৃতদের পুলিশ ও সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। আর মুক্তিপনের টাকা চাওয়ার ব্যাপারে বাচাই- বাছাই করে দেখা হচ্ছে।।

এদিকে নিখোঁজ অংথুইচিংয়ের স্ত্রী ওয়াংমাপ্রু মারমা পাহাড়বার্তাকে জানায়, আমার স্বামী দিন মজুর, স্বামীর কাছে মোবাইল নেই। সপ্তাহ হয়ে গেছে, কোনো খোঁজ মিলেনি। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী আর বাড়ি ফিরে আসবে কিনা জানিনা। তার কি অপরাধ ছিল তাও জানিনা আমি।

আরও পড়ুন