লামায় অপরিকল্পিত ঝিরি খননে ভাঙ্গনের মুখে শতাধিক বসতঘর ব্রিজ ও ফসলি জমি

NewsDetails_01

লামায় ঝিরি (খাল) পূণঃ খননে দেবে যাওয়া ব্রিজের একাংশ
বান্দরবানের লামা উপজেলার মধুঝিরি নামের একটি পাহাড়ি ঝিরি (খাল) পূণঃখননের কারণে পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়, চলতি বর্ষায় প্রবল বৃিষ্টর সময় উজান থেকে নেমে আসা পানির ¯্রােতের টানে ঝিরির দু’পাড়ের বসতঘর ও ঝিরির ওপর নির্মিত বেশ কয়েকটি ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে ঝিরিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। গত কয়েক দিনে অনেকের মূল্যবান অবকাঠামো এবং ফসলি জমি ঝিরি গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, ঝিরি থেকে উঠানো মাটি আবাদি জমিতে স্তুপ করে রাখার কারণেও পুণরায় ঝিরি ভরাটসহ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দু’পাড়ের বাসিন্দারা। এতে মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। অপরিকল্পিত ডিজাইন, প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ না করা, বাস্তবতা বিবর্জিত স্পেসিফিকেশন এবং নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে মধুঝিরি খালের পুনঃখনন কাজ জনভোগান্তির কারণ হয়েছে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম ঝিরি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, লামা পৌরসভা এলাকার ৩, ৭নং ওয়ার্ড ও লামা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় নুনারঝিরি নামের একটি পাহাড়ি ঝিরি। যা সমতলে খাল হিসেবে পরিচিত। এ ঝিরির দু’পাড়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে শতশত পরিবারের লোকজন বসবাস করে আসছে প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোটো নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় উপজেলার মধুঝিরি খালের ৩.৮০ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের জন্য প্যাকেজ গ্রহণ করে। ৮৫.২৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের এই প্যাকেজটি বাস্তবায়নের জন্য নোয়াখালী জেলার মেসার্স মোস্তফা এন্ড সন্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৮৫.৭৫ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। গত ৮ জানুয়ারি প্যাকেজের কার্যক্রম শুরু হয়ে গত ২৭ জুন প্যাকেজের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনিয়ম ও অপরিকল্পিতভাবে খননের কারণে ঝিরিটির দু’পাড় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, পাশাপাশি ঝিরির বিভিন্ন স্থানের ওপর নির্মিত ব্রিজগুলোর নিচের অংশের মাটি সরে দেবে যাচ্ছে। এছাড়া খননের সময় ঝিরি থেকে উঠানো কাদা মাটিগুলো দু’পাড়েই স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিধায় পূণরায় মাটিগুলোর বৃষ্টির পানির সাথে ঝিরিতে পড়ে তলদেশ ভরাট হয়ে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে কয়েক একর ফসলি জমিও তলিয়ে যেতে পারে।
ভুক্তভোগী আরো বলেন, ঝিরিটি এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার অবস্থা নদীর বাঁধভাঙা এলাকার লোকজনের চেয়েও খারাপ হয়ে উঠেছে। চলতি বর্ষার মধ্যেই বেশ কয়েকটি বসতঘর ঝিরিতে তলিয়ে যাবে।
ভুক্তভোগী মো. সামছুল আলম বলেন, যতই বর্ষণ হউক, আগে কখনো ঝিরিতে ভাঙ্গন দেখা যায়নি। পূণঃখননের কারণে আমার বসতবাড়ীর তিন দিকেই ধসে পড়েছে। এর কারন খননের ফলে ঝিরির দু’পাড়ের মাটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এখন দুই লাখ টাকা খরচ করেও ভাঙ্গন ধস ঠেকাতে পারছিনা। চলতি বর্ষার মধ্যেই বসতঘরটি ঝিরিতে বিলীন হয়ে যাবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় বসবাস করবো বুঝতে পারছিনা। নয়াবাজারের বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, ঝিরি খননের পর পরেই ঝিরির নয়াপাড়া এলাকায় নির্মিত ব্রিজটি মাটি সরে দেবে গেছে। এখন ঝিরি পারাপারে শত শত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মধুঝিরি পুনঃখনন করার পর বর্তমানে ঝিরিপাড়ের বসতবাড়িসহ মূল্যবান স্থাপনা যে কোনো মুহূর্তে ঝিরিগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল জানিয়েছেন, সমতল এলাকার খাল খনন এবং পাহাড়ি এলাকার ঝিরি খনন একই ডিজাইনের করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি সরেজমিন পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, পুনঃখননকৃত মধুঝিরি খালের ভাঙন রোধ ও বসতবাড়িসহ স্থাপনা রক্ষায় তড়িত্ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুনঃখননকৃত ঝিরির (খাল) বিষয়টির বর্তমান অবস্থা প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে। ঝিরির উভয় পাশের বসতবাড়ি ও অবকাঠামো রক্ষায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন