লামায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৭ দোকানে লুটপাট : সেনাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ফের সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ দিন দুপুরে ১৭টি দোকানে লুটপাট চালিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা বাজার ও ছোটবমু এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা নগদসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে এবং মিলন পাল নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
ঘটনার পর ইউনিয়নের বৈল্ল্যারচর, মেউলারচর, বরিশাল পাড়া, এম. হোসেন পাড়া, চিউনি পাড়া, লক্ষণ ঝিরি, ঠাকুরঝিরি, বেগুনঝিরি, পাহাড়পাড়া, ছোটবমু, আশ্রয় প্রকল্প, মেরাখোলাসহ পুরো ইউনিয়নের মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। গত ৮ আগস্ট একই ইউনিয়নের বৈল্লারচর ও ঠাকুরঝিরি এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান ও বসতঘরে হামলা ও লুটপাট চালায় ওই সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারী অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২৫-২৬ জনের একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে ছোটবমু এলাকায় হামলা চালায়। এ সময় তারা শুক্কুর পাড়া ও পোয়াং পাড়ার খুইল্যামিয়া, রুহুল কাদের, জামাল উদ্দিন, নাছির উদ্দিন, হোসেন আহমদ, জাকের হোসেন, তাহেরা বেগম, বিদর্শন বড়–য়া, কামাল উদ্দিন, মোস্তাক আহমদের দোকানে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ৩৫ হাজার নগদ টাকা লুটে নেয়। এরপর মেরাখোলা বাজারের মো. কায়েশের দোকান থেকে নগদ ১৮ হাজার টাকা, নেপাল চন্দ্র সেনের দোকান থেকে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৬০ হাজার টাকার ঔষুধ, অমর বসাকের দোকান থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিলন পালের দোকান থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ হাজার টাকার মারামাল নিয়ে তারা।
আরো জানা গেছে, এ সময় চাঁদার টাকা না দিলে ব্যবসায়ী মিলন পালকে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় প্রত্যেক বসতঘর থেকে ১ হাজার ও দোকান থেকে ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবীর একটি চিঠি দিয়ে যায়। চিঠিতে তিনটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। নম্বরগুলো হলো- ০১৮৮৫০৮৭৯৮৩, ০১৮৩৬২০২৮০৪, ০১৮৮৩৫৫৬৪৮৪। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদার টাকা না দিলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিবে বলেও হুমকি প্রদান করে যায় সন্ত্রাসীরা। যাওয়া পথে সন্ত্রাসীরা নকশা ঝিরি এলাকায় অস্ত্রের মুখে কয়েকজনকে জিম্মি করে আরো ২টি দোকান লুট করে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জনিয়েছেন। এরপর স্থানীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে নকশা ঝিরি নামক স্থানে সেনাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সেনাবাহিনীর পোশাকের মত ইউনিফর্ম পরিহিত ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল সন্ত্রাসীরা। তারা মার্মা, ত্রিপুরা ও চাকমা ভাষায় কথা বলে। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা তারা মেরাখোলা বাজারে অবস্থান করে লুটপাট ও হামলা চালিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা।
এই ব্যাপারে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, গত ত্রিশ বছরেও এ ধরণের হামলার সাহস পায়নি সন্ত্রাসীরা। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। একইভাবে আবারো হামলা করতে পারে সন্ত্রাসীরা। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকায় একটি সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। জনসাধারণের নিরাপত্তা দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে আলীকদম সেনাবাহিনীর জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল মাহাবুবুর রহমান পিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে তিন দিকে থেকে সেনাবাহিনীর ৩টি টিম ঘটনাস্থলের দিকে পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর একটি টিমের সাথে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয় বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন