লামায় ২ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে মামলা
ঘটনা আড়ালে তৎপর কোয়ান্টাম !
বান্দরবানের লামা উপজেলায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কসমো স্কুলের মাঠে খেলতে গিয়ে জমে থাকা পানি নিস্কাশনের পাইপে ঢুকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে। মৃত শিক্ষার্থী শ্রেয় মোস্তাফিজের চাচা জাকির মোস্তাফিজ মিলু বাদী হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও আবাসিক তত্বাবধায়ককে বিবাদী করে মামলাটি করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, শিক্ষার্থী আবদুল কাদের জিলানী ও মো. শ্রেয় মোস্তাফিজ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সবুজায়ন আবাসিকের ছাত্র ছিল। তারা সহপাঠিদের সাথে গত সোমবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে খেলার ছলে স্রোতের টানে পানি নিস্কাশনের পাইপের ভিতর ঢুকে যায়। সহপাঠিরা এ ঘটনা দেখে চিৎকার শুরু করলে আরিফ নামের এক মাঠ কর্মীসহ অন্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে দুই শিক্ষার্থীই স্রোতের টানে পাইপ থেকে পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঝিরিতে পড়ে যায়। পরে ঝিরি থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে কাছাকাছি লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুল কাদের জিলানী ও শ্রেয় মোস্তাফিজকে মৃত ঘোষনা করেন।
হোস্টেল সুপার মো. তানিম বলেন, বাচ্ছাদেরকে বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তারা চোখ ফাঁকি দিয়ে পূণরায় ওই স্থানে খেলতে গেলে এ দূর্ঘটনা ঘটে। এতে আমাদের বিন্দু মাত্রও অবহেলা ছিলনা। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি বাচ্ছাদের বাঁচাতে।
এ বিষয়ে মৃত দুই শিক্ষার্থীর সহপাঠি ইসমাইলও সাব্বির জানান, আবদুর কাদের জিলানী ও শ্রেয় মোস্তাফিজ আমাদের বন্ধু ও একই ক্লাশে একসাথে পড়ালেখা করতাম। সোমবার সকালে আমরা সবুজায়নের পশ্চিমে গর্তের পানিতে খেলছিলাম। এ সময় আচমকা পানি চলাচলের পাইপের ভিতর একে একে ঢুকে যায় জিলানী ও মোস্তাফিজ। তাৎক্ষনিক বিষয়টি আমরা মাঠ কর্মকর্তাকে জানালে তিনিসহ কোয়ান্টামের অন্য স্টাফরা তাদেরকে উদ্ধার করেন।
এদিকে মৃত শ্রেয় মোস্তাফিজের বাবা বুলবুল মোস্তাফিজ জানায়, গত সোমবার সাড়ে ১১টায় ঘটনাটি ঘটলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে বিকাল ৩টার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মর্মান্তিক ঘটনাটি জানান। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই আমার সন্তানকে হারিয়েছি।
আরো জানা গেছে, টানা ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে ঘন ঘন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলেও এইসময় ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী বৃষ্টির মধ্যেই খেলা করতে প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া দায়িত্বরতদের অবহেলা প্রতিয়মান হয়। তাছাড়া ১৩ ইঞ্চি পাইপের মধ্যে ঢুকে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কি তারা এভাবে মৃত্যুবরণ করেছে? নাকি তাদের হত্যা করে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য পাইপের বিষয়টি সামনে এনে প্রকৃত ঘটনা আড়ালে মেতেছে কোয়ান্টাম।
আরো জানা গেছে, দায়িত্ব অবহেলার কারনে এই দুই শিশু শিক্ষার্থী নিহত হলেও বান্দরবান জেলা থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা সংবাদকর্মীদের ফোন রিসিভ না করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মঙ্গলবার দিনগত রাতে মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনার কারনে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ এই নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্ত্রীদের অংশ গ্রহনে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও উপজেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় প্রশ্ন উঠেছে কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষের এতো ক্ষমতার উৎস কোথায়।