লামায় ৮ মাসে ৯৬৯ মামলা নিস্পত্তি

আস্থা ফিরেছে বিচার প্রার্থীদের মাঝে

NewsDetails_01

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা শহরের প্রবীণ বাসিন্দা ফার্মেসী ব্যবসায়ী সজল কান্তি দাশ ও পুত্র রুবেল দাশ। ২০২১ সালে সম্পত্তি নিয়ে দেখা দেয় এ পিতা-পুত্রের মধ্যে বিরোধ। একে অপরের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। ১টি মামলা হতে গড়ায় ৪টি পর্যন্ত। পিতা-পুত্রের এ বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’ভাগে বিভক্ত হয় এখানকার হিন্দু সমাজও। সামাজিক ও স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টার পরেও কোনভাবেই সমাধান করা যায়নি এ বিরোধ। উপরন্তু পিতা-পুত্রের সম্পর্ক গড়ায় দা-কুড়ালে। তাই মানবিক দিন চিন্তা করে বিষয়টি সমাধানের লক্ষে আমলে নেন, উপজেলার সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. বেলাল উদ্দিন। তার উদ্যোগে মামলাগুলো নিস্পত্তি হলে পিতা পুত্রের মধ্যে পূণরায় ফিরে আসে সু-সম্পর্ক। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন পিতা-পুত্র সহ এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে পুত্র রুবেল দাশ আদালতের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেন, আমাদের মাঝে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল একে অপরের চেহারা পর্যন্ত দেখতে ঘৃণা হতো। এ মামলা নিস্পত্তি না হলে আমাদের মধ্যে খুনাখুনীর ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা ছিল। ঠিক সময়ে আদালতের মধ্যস্থতায় আমাদের মামলাগুলো নিস্পত্তি হওয়ায় আমরা এখন আগের মত একসাথে বসবাস করছি।

এ ধরনের আরও অনেক মামলা চলমান ছিল, যেগুলো বহু বছর ধরে ঝুলে ছিল। কিন্তু গত আট মাসেই এ রকম ৯৬৯টি মামলার রায় হয়েছে বলে জানা গেছে উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে।

শুধু যে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা মামলার রায় হয়েছে তা নয়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দক্ষতায় মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট এখন অনেকটাই কমে এসেছে। মোট কথা ৮ মাসে ৯৬৯টি মামলা নিস্পত্তি করে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক মো. বেলাল উদ্দিন। এতে আদালতের প্রতি আস্থা ফিরছে বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।

NewsDetails_03

আপোস যোগ্য মামলায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাবুবুর রহমানের নির্দেশনায় নিরলস কাজ করে বিচার নিষ্পত্তিতে বেশির ভাগ আপোস করিয়ে মামলা নিস্পত্তি করেছেন চৌকি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. বেলাল উদ্দিন। এতে বিচারপ্রার্থীরা উৎসাহিত হয়ে পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে স্বেচ্ছায় মামলা তুলে নিচ্ছেন খুশি মনে। স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্রের মধ্যে মিল, স্ত্রীর মোহরানা আদায় করে দেওয়া, সীমানা বিরোধ নিস্পত্তিসহ জাল জালিয়তকারীকে দ্রুত মামলা নিস্পত্তির মাধ্যমে কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে।

নিষ্পত্তির পেছনে সময় বেশি লাগার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, মামলা করার পর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে অভিযোগপত্র দায়ের করা হলে তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়। তারপর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাক্ষী হাজিরে অনীহা, চিকিৎসক হাজির না হওয়া, সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতার অভাব সহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় বেশি লাগত। ফলে মামলাজটের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছিল।

আদালত সুত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে আদালতে যোগদান করেন সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্টেট মো. বেলাল উদ্দিন। যোগদানের পর থেকে তিনি আইনের সেবা দিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপোস যোগ্য মামলা স্বামী-স্ত্রীর অমিল, পিতা-পুত্রের অমিল, মোহরানা আদায়, সীমানা বিরোধ, জাল-জালিয়াতি বিষয়ে দ্রুত নিস্পত্তি করিয়ে দেন। তিনি যোগদানকালে আদালতে মামলা ছিল ১০৭৫টি। প্রতিমাসে গড়ে মামলা দায়ের হয় ১০০টি। এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর ২০২১ হতে ৩১ জুলাই ২০২২ ইং পর্যন্ত ৮ মাসে তিনি মামলা নিস্পত্তি করেন ৯৬৯টি। বর্তমানে মামলা রয়েছে ৮৬৪টি। নিস্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে অনেক বছরের পুরানো মামলাও রয়েছে। এখন আর ৫ বছরের অধিক কোন মামলা নেই এ চৌকি আদালতে।

মামলা নিস্পত্তির বিষয়ে লামা উপজেলা আইনজীবি সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাদেকুল মাওলা ধ্রুব ও সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন মিয়া সহ সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহীম এক সূরে বলেন, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অত্র আদালতে যোগদানের পরে এক বছরের চেয়েও কম সময়ে যে পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, এতে পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। বিচার প্রার্থী জনগণ আইনের সুফল পাচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. বেলাল উদ্দিন নিজ দক্ষতায় এত সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করে সমগ্র দেশের মধ্যে এক নজির বিহীন ঘটনা সৃষ্টি করেছেন বলেও জানান তারা।

আরও পড়ুন