লামা, ফাঁসিয়াখালী সড়কে ছিনতাই ও ডাকাত আতঙ্ক
উভয় পাশে ঝোপ ঝাড়, আর রাবার সহ বনজ বাগান। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বান্দরবানের আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক। এ সড়কের ত্রিশডেবা-বনপুর রাস্তা মাথা থেকে পাশের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হাঁসেরদিঘী পর্যন্ত এলাকা এখন আতংকের নাম। যেখানে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় ছিনতাই আর ডাকাতি। একের পর এক ডাকাতি আর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও লামা ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে পুলিশি পাহারা ছাড়া নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। ফলে ঘটেই চলছে একের পর এক ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা।
বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চরম আতংকে আছেন এ সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইয়াংছা পার হয়ে হয়ে সাড়ে ৫ মাইল ৬ ও ৯ মাইল সহ লাল গেইট, রাবার বাগান, সবুজ গেইটে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আশপাশে জনবসতি কম থাকায় অনেকটা নির্জন থাকে সড়কের এ অংশগুলো। সেই সুযোগেই সড়কে চলাচলরত মোটরবাইক থামিয়ে মারধর ও সর্বস্ব কেড়ে নেয় ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা।
অপরদিকে চকরিয়া উপজেলার হাসেরদিঘি থেকে কুমারী ব্রিজ পর্যন্ত রিজার্ভ এলাকা হওয়ায় এ অংশটি আরো বেশি আতংকের নাম। প্রায় সময় ওইসব স্থানে একাধিকবার ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা অব্যাহত থাকায় এলাকাটি এখন স্থানীয়দের কাছে আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে না থাকলেও স্থানীয়রা বলছেন মাসে অন্তত ১০-১১ টি ছোট-বড় ঘটনা ঘটছে সড়কের এসব স্থানে।
সম্প্রতি ওই স্থানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন লামা পৌর এলাকার লামামুখ এলাকার রফিক সরকার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে, সড়কের ইয়াংছা সাড়ে ৫ মাইল নামক স্থানে পৌঁছলে বন্দুক ও দা ছুরি নিয়ে ৭-৮ জন ডাকাতদল মাথায় আঘাত করে, এসময় গুরুতর আহত হয়। পরে অন্য মোটর সাইকেল আসলে ডাকাতরা তার মোটরসাইকেলটি নিতে না পেরে পাহাড়ের পাশে ফেলে চলে যায়। পরে রফিক সরকারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন অপর মোটর সাইকেলের যাত্রীরা।
শুধু রফিক সরকার নয়; এমন ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন মিজানুর রহমান, সাইফুল, আরিফ সহ আরো অনেকে। তাদের ঘটনা প্রায় একই রকম। এদিকে গত ৬ মার্চ রাতে। লামা ফাঁসিয়াখালী ইউপির হায়দারনাশী এলাকার রবিউল হাসান অফিসের মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ করে রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় ছিলতাইকারীরা সড়কে গাছ ফেলে গতিরোধ করে গভীর জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে আমার নগদ টাকা, মোবাইল ও নতুন বাইকটি নিয়ে ফেলে। পরে এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরীও করেন রবিউল হাসান।
এরপর কিছুদিন ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধ থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ডাকাতরা। সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার দিনগত রাতে ইয়াংছা রাবার বাগান এলাকায়। আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম চকরিয়া থেকে ফেরার পথে ৯-১০ জনের একদল ডাকাত গাড়ির গতিরোধ করে বন্দুক তাক করে। এ সময় গাড়ি চালক কৌশলে দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার কারণে বেঁচে যান। এর আগের দিন শুক্রবার দিনগত রাতে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারমার ঝিরি এলাকায় রাত ২টার দিতে মো. খোকনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ডাকাতে গুলিতে ও মারধরে মো. খোকন সহ দুইজন আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কাছাকাছি চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলেন, লামা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনস্বার্থে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সড়কে চলাচলকারী ব্যবসায়ীসহ গণমানুষ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। সড়ক দিয়ে গাড়িতে যাতায়াতের সময় ডাকাতদের আক্রমণে ভয়ে সাধারণ মানুষ শংকিত, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এছাড়া প্রতিনিয়ত রাতের বেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক চুরি হচ্ছে মোটর বাইক। রাতের বেলা বাড়ীর উঠান ও বাসার ভেতর থেকেও লক ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে মোটর সাইকেল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা, চেকপোস্ট ও রাতে পুলিশ ফোর্স থাকার পরও একের এক বাইক চুরি হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো লামা উপজেলায়।
অপরদিকে কিছুদিন ধরে লামা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরির খবর পায় পুলিশ। তারপর থেকে থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ টহল কার্যক্রম জোরদার করে। গত ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ৭টার দিকে ঘনকুয়াশায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি সড়কের লাইনঝিরি মোড় দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিগনাল দেয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রথীন্দ্রনাথ দাস। সিগনাল দেওয়ায় গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যায় লোকটি। পরে উদ্ধার মোটর সাইকেলটির ইঞ্জিন সুইস ডাইরেক্ট ও লক ভাঙ্গা দেখে চোরাই মোটরসাইকেল বলে ধারনা করে পুলিশ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে গাড়ির মালিক মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে থানায় যান। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ও মালিক মামলা করতে না চাইলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে মালিককে গাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
গাড়ির মালিক মো. সরওয়ার বলেন, রাত তিনটার পরে আমার ঘর থেকে তালা ভেঙ্গে চোর আমার মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। লামা থানা ও ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় আমি গাড়িটি ফিরে পেয়েছি।
তবে এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডাকাতি ও ছিনতাই ঘটনার পরপর সড়কে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে করে ছিনতাই ও ডাকাতি রোধ হবে বলে আশা করছি।