লকডাউনে চরম বিপাকে বান্দরবানের ঋষি সম্প্রদায়
অন্য অনেক পেশার মানুষের মতো লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বান্দরবান পৌর এলাকার ঋষি সম্প্রদায় (যারা জুতা সেলাই করে)। এই সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পৌর এলাকার মুচি পরিবার।
পৌর এলাকার (শহর মডেল স্কুলের) সামনে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তারা, তবে লকডাউনে কাজ না থাকায় বেশিরভাগ মুচি ঘরে বসে আছেন। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বসলেও মিলছে না ক্রেতা।
করোনা ঠেকাতে চলমান লকডাউনে বন্ধ রয়েছে কাজ। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। বান্দরবানে ঋষি সম্প্রদায়ের জন্য এই লকডাউন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাতে গিয়ে বান্দরবান শহরের মুচি (ঋষি সম্প্রদায়) পরিমল ঋষি বলেন, লকডাউন হওয়া পর থেকে মানুষ জুতা সেলাই করতে আসে না । অন্যদিকে দোকান পাট বন্ধ রাখতে হয়। যার ফলে আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোনাতন ঋষি বলেন, আগে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হলেও বিধিনিষেধের ফলে দিনে ৫০ টাকা রোজগার করা অনেক কঠিন। ঘরে চাল নেই, চাল নিলে ঘরে রান্না হবে। কিন্তু এখনও ৪০ টাকার কাজ করতে পারিনি। চাল কিনব কী দিয়ে আর অন্য কিছুই বা কিনব কীভাবে? সকালে মরিচ দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছি।
কথা হয় আরেক মুচি সুমন ঋষি সঙ্গে, তিনি বলেন, সারাদিনে ৬০ টাকার কাজ করেছি। গতকাল সকালে ১০ টাকা আর দুপুরের পর ৬০ টাকা, এই মোট ৭০ টাকার কাজ করেছি। এতে চারজনের সংসারের বাজার করেছিলাম। আসার সময় বউ বলে দিয়েছে তেল নিতে। এখনও এক লিটার তেলের দাম রোজগার করতে পারিনি। মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। জুতা-স্যান্ডেল-ব্যাগ কই পাব। যাদের অনেক দরকার তারাই শুধু বের হয়। তাও হাতে গোনা।
স্থানীয় মুচিরা জানান, এখানে সবাই মিলে প্রায় ৩০ জন মুচি আছে। কারোর কাজ নেই। সবাই মিলেও দুই হাজার টাকা মনে হয় রোজগার করতে পারেনি। কাজ না থাকায় মানুষ বাজারে আসে না। আবার অনেকে দুপুর পর্যন্ত থেকে চলে গেছে।
বিপুল নামে এক মুচি জানান, করোনার প্রথম প্রথম কিছু সরকারি সহযোগিতা পেয়েছি। লকডাউন শুরুর পর আর কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারি সহযোগিতা আমাদের জন্য সোনার হরিণের মতো। সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া ছাড়া আমাদের মুক্তি কেউ দিতে পারবে না।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, কর্মহীন যারা বিপাকে রয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সহায়তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসন বরাদ্দ অনুযায়ী অসহায় মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে যাচ্ছেন। এতের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট কমছে।