আমাদের উসাইনু, বেকার থেকে সফল উদ্যোক্তা !

NewsDetails_01

বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদরের মধ্যমপাড়ার ছেলে উসাইনু মার্মা । ২০১৩ সালে শেষ করেন কৃষি ডিপ্লোমা। কোর্স শেষে খুঁজেন চাকরি । কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিলেও হয়নি সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরি। তাই কোন উপায় না দেখে বান্দরবানের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগির উপরে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। সেই প্রশিক্ষণ থেকে উদ্দীপ্ত হন উসাইনু । তখনই তার ভাবনায় আসে কৃষি। নেমে পড়েন কাজে। এতদিনের পরিশ্রমের সরকারি স্বীকৃতিও পেলেন ১ লা নভেম্বরে । জাতীয় যুব দিবসে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাতীয় যুব পুরস্কার-২২ বিজয়ী উসাইনুর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

বেকার থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই উসাইনু মার্মা বলেন, চাকরি পেছনি অনেক ছুঁটেছি। কিন্তু হয়নি। যুব উন্নয়ন থেকে নিয় প্রশিক্ষণ । এরপরেই মনোনিবেশ করি খামারে । কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, একগ্রতা থাকলে সফলতা আসবে। আর কৃষি খামার করতে আমার পরিবারের সদস্যরা আমার পাশে ছিল ।

২০১৪ সালে বান্দরবান সদরের জামছড়িতে শ্বশুরের ২৫ একর জমিতে সমন্বিত কৃষি খামার করেন। খামারের শুরুতেই যুব উন্নয়ন থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন । ওই ঋণের টাকা দিয়ে কেনেন ৫টি গরু । এরপর করেন মাল্টা বাগান । আরও পরে করেন ড্রাগন, আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান। শুধু ফলের বাগান, তার সমন্বিত খামারে পালন করেন হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু আর মাছ চাষ।

উসাইনু বলেন, খামার থেকে প্রথমে আয় আসত খুবই কম। তবুও ধৈর্য্য হারায়নি । এখন আমার খামারে চারজন ছেলে কাজ করে। যাদের মাসিক বেতন ৮-১৫ হাজার টাকা। আমার বাগানে চারজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি খামার থেকে ১২ মাসই ফল বিক্রি করি । খরচ বাদে মাসে এখন আয় ২ লাখ টাকা।

উসাইনু মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। ২০১৩ সালের কৃষির উপর ডিপ্লোমা করেন। ডিপ্লোমা শেষে কৃষির উপর বিএবিএড লেখা পড়া করলেও বাগান দেখা শুনার কারণে আর লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। পুরোদমেই মনোনিবেশ করেন বাগানে।

NewsDetails_03

চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় উসাইনু তরুণ-যুবকদের মাঝে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। এরইমধ্যে জামছড়িতে ২১৬ জনকে সাতদিন ব্যাপী কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

উসাইনু বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরিতে কোন স্বাধীনতা নেই । ব্যবসা করলে স্বাধীনতা থাকবে।

সফল এ উদ্যোক্ত বলেন, প্রজেক্টটা আরো বাড়াতে চাই । গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় । আর্থিকভাবে সার্মথ্য হলে একটা আশ্রম করার ইচ্ছে আছে ।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পুলু প্রু জানান, একজন বেকারকে আমরা প্রশিক্ষণে নিয়ে আসি । উসাইনু যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আজ সে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমাদের জন্য গর্ব ।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। নিজের অর্থ নিজেকে উপার্জন করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় ।

আরও পড়ুন