আমার জমি জবর দখল করলে আত্মহত্যা করবো
লামায় অসহায় পাহাড়ী পরিবার
২০০৪ সাল থেকে হেডম্যান রিপোর্ট মূলে সাঙ্গু মৌজার ৫ একর পাহাড়ি জমি বহু কায়িক শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে আবাদ করে খামার ঘরসহ ফলদ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছি। কেউ এ জমি জবর দখল করলে আমি আত্মহত্যা করবো। কারণ এ জমি ছাড়া আমার আর কোন জমি নেই। এ জমিই পরিবারের সদস্যদের উপার্জনের একমাত্র উৎস, আর কোন বিকল্প নেই।
আজ সোমবার সকালে কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বললেন, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি রামগতি পাড়ার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বাসিন্দা মৃত নবী চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে বৃদ্ধ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা (৬০)।
তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ গিয়াস উদ্দিনের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামীয় রাবার প্লট থেকে আমার জমির দূরত্ব প্রায় ৩৫০ ফুট। আমার সৃজিত বাগানে কোন রাবার গাছও নেই। অথচ গিয়াস উদ্দিন আমার ভোগদখলীয় জমি তাদের দাবী করে অযথা হয়রানি করে আসছেন।
এদিকে প্রতিপক্ষ দ্বারা আরেক ভুক্তভোগী ক্যচিং মুরুং বলেন, ১১২নং হোল্ডিং মূুেল ৫ একর জমি আবাদ করে বসতঘর সহ বাগান সৃজন করে দীর্ঘ বছর ধরে ভোগ করে আসছি। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন গং এ জমিও তাদের দাবী করে বিভিন্ন সময় মামলা হামলা নির্যাতন করছেন। এ জমি জবর করলে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের দিকে এ জমি নিযে বিরোধ দেখা দিলে হেডম্যান. ইউপি সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংশা হয়। কিন্তু মিমাংসিত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে আদালতে মামলা দিয়ে পুণরায় আমাদেরকে হয়রানি শুরু করেছেন প্রতিপক্ষ গিয়াস উদ্দিন গং।
তবে এই বিষয়ে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন ও তার ভাই ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুন জানান, সাঙ্গু মৌজার ৭২৭ নং দাগের রাবার হোল্ডিং নং ৮ মূলে তাদের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাবা আবদুর রাজ্জাক মারা যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং সহ অন্যরা বিভিন্ন সময় রাবার প্লটে ঢুকে গাছের চারা রোপন করে প্রায় ১০ একর জমি জবর দখলে নেন। পরে এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, মেম্বারসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষরা পূণরায় রাবার প্লটে ঢুকে জঙ্গল পরিস্কার করে গাছ লাগানোর চেষ্টা করেন। একারণে প্রতিপক্ষের ৫জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করা হয়, যেন তারা রাবার প্লটে যেতে না পারে। এমনকি কারো জামি দখল করেনি বা দখলের চেষ্টাও করছে না বলে জানান তারা।
অভিযোগে জানা যায়, ২০০৪ সালে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা হেডম্যান রিপোর্ট মূলে দুই একর প্রথম শ্রেণী ও তিন একর দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি আবাদ করে তথায় খামার ঘর সহ বিভিন্ন ফলজ বনজ গাছের বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছেন। একই ভাবে পাশের ক্যাচিং মুরুং ১১২নং হোর্ল্ডি মূলে তিন একর তৃতীয় ও দুই একর দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি আবাদ করে বসতঘর ও বিভিন্ন ফলজ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করছেন। পাশে বগাইছড়ি গ্রামের আবদুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তির নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর ২৫ একর রাবার প্লটের কাগজ দেখিয়ে ৩৫একর জমি দখল করে আছে তার ওয়ারিশরা।
শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে অতর্কিতভাবে ৯-১০ জন শ্রমিক লাগিয়ে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং ম্রো’র জমির প্রায় ৩০০ কলা গাছ সহ বিভিন্ন গাছের চারা কেটে দেন আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুন। এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও ভুক্তভোগীরা কোন সুরাহা পায়নি।
একপর্যায়ে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, কারবারী, ইউপি সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি মিমাংশা হয়। কিন্তু মিমাংশিত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে কিছুদিন যেতে না যেতেই শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে গত ২৪ জুন ইউপি সদস্য হোসাইন মামুনের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাতে ক্যাচিং মুরুং, থাংবুই মুরুং, বলি চন্দ্র ত্রিপুরা, হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও তার ছেলে এনজিও কর্মী চন্দ্র মনি ত্রিপুরাকে বিবাদী করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদী চন্দ্র মনি ত্রিপুরা বলেন, জমি আমার বাবার। আমার সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। আমি একজন এনজিও কর্মী। অথচ আমাকেও মামলায় আসামী করে হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে বিরোধ মিমাংশ করে দেওয়ার পরও গিয়াস উদ্দিন গং পুণরায় হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং এর জমি দখলের চেষ্টা সহ মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে জানান সাঙ্গু মৌজা হেডম্যান চম্পাট মুরুং।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন চৌধুরী জানায়, আমার জানা মতে ১৯৮৬সাল থেকে গিয়াস উদ্দিনরা প্লটের জমিতে রাবার বাগান সৃজন করে দখলে আছেন। গত কয়েক বছর আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও গিয়াস উদ্দিনদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় হেডম্যান, ইউপি সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় পরিমাপ করে যার যার জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখন আর জমি নিয়ে বিরোধ থাকার কথা না।