মাটিরাঙ্গায় ১০শয্যার জনবলে চলে ৩১ শয্যার হাসপাতাল

NewsDetails_01

পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা। এ উপজেলা টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল হলেও উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধ্যবধি কাঙ্খিত কোন স্বাস্থ্যসেবা পায় নি এ অঞ্চলের লোকজন। জনগণের এ চাহিদার কথা কখনো ভেবেও দেখে নি কেহ। অথচ ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা হবার দরুন বিভিন্ন সংক্রামক রোগের মোকাবেলা করতে হয় প্রতিনিয়ত। রোগের সাথে পাঞ্জা লড়ে কত লোককে অকালে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে সেটার খবরও কেহ রাখে নি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস থেকে জানা যায়, সর্বশেষ জনশুমারীর তথ্যানুযায়ী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১লাখ ২৬ হাজার ৬শত ৯জন। উপজেলাটি জেলার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা হলেও বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে এ উপজেলায় একটিমাত্র হাসপাতাল রয়েছে। যেটি ৩১ শয্যার সাইনবোর্ড দৃশ্যমান হলেও ১০ শয্যার জনবল ও নেই এ হাসপাতালটিতে। ফলে চরমভাবে জনবল সংকটে ভুগছে হাসপাতালটি। এ সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জনপদের লোকজন।

এদিকে নেই প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। টয়লেট থাকলেও ব্যবহারের অনুপযোগী। জনবল সংকট থাকলেও যা আছে তার মধ্য থেকে বছরের পর বছর সংযুক্তিতে আটকে আছেন চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ সহ অনেকে। সব মিলিয়ে হাসপাতালটি ‘লেজে গোবরে’ অবস্থা।

তাছাড়া, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা আবাসিক ভবনগুলো কালের সাক্ষী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ ভবনের দেয়াল এবং পলেস্তরা ধসে পড়ছে। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা। আবাসিক ভবন ও হাসপাতালের সম্মুখ এলাকায় ময়লায় বর্জ্যে দুর্গন্ধে ভরা। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেই কোন উদ্যেগ। তাছাড়া সীমানা প্রাচীর অরক্ষিত হওয়ায় অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা সংকটে আছেন সকলে। একটিমাত্র সরকারি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই সরকারি চালক। মাষ্টার রুলেই থমকে আছে চালকের চাকরি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে কলমে ১০ শয্যার হলেও ইতিমধ্যে ৩১ শয্যার সাইনবোর্ড দিয়ে সেবাদান শুরু হয় ১০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই। তবে ৩১ শয্যার অবকাঠামোগত অনুমোদন না পেলেও ডায়েট ও ঔষধের অনুমোদন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শেখ আবুল হাসনাত।

হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শয্যার বিপরীতে রোগী খুব বেশি হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে সেবা নিতে হচ্ছে মেঝেতে ও বারান্দায়।
কেউ কেউ শয্যা সংকটের কারণে ছুটে যাচ্ছেন সদর হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার রোগী। এতে অবকাঠামো ও জনবল সংকটকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বিপুল জনসংখ্যা অনুপাতে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী শয্যা সংখ্যা অতি নগন্য। দ্রুত এ উপজেলায় ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করার দাবি করেন সকলে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট চলছে। তাছাড়া ১০শয্যার জনবল দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৩১ শয্যার হাসপাতাল।

প্রতিদিন হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অল্প সংখ্যক চিকিৎসক। সে কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জনপদের লোকজন। ফলে অধিকাংশ রোগীদের ছুটতে হচ্ছে জেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে।

NewsDetails_03

এদিকে গুইমারা উপজেলায় কোন হাসপাতাল না থাকার দরুন ওই উপজেলার লোকজন এখানে সেবা নিতে আসেন। তাছাড়া পাতাছড়া পুনর্বাসন, দূরবর্তী তাইন্দং সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে লেকজন এখানে সেবা নিতে ছুটে আসেন। এত বড় উপজেলায় একটি মাত্র এক্স-রে মেশিন থাকলেও নেই মেডিকেল ট্যাকনোলোজিষ্ট, ব্র্যাকের একজন ট্যাকনোলোজিষ্ট শুধুমাত্র বুকের এক্স-রে করে থাকেন। একইভাবে একটি ডেন্টাল ইউনিট থাকলেও যন্ত্রপাতি বা প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়াল নেই। তাছাড়া ডেন্টাল সার্জন সদর হাসপাতালে প্রেষণে আছেন। মেডিক্যাল ট্যাকনোলোজিষ্ট মো. জহিরুল ইসলাম মোহন ডেন্টালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে এ হাসপাতাল এ্যনেসথেসিয়া ও গাইনি কনসালটেন্ট থাকলেও যথাযথ ওটির অভাবে সিজারিয়ান সহ গুরুত্বপূর্ণ কোন অপারেশন হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় , স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালাতে যে লোকবল প্রয়োজন তাও দেওয়া হয়নি। নিয়মানুযায়ী ১০শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন ১৩ জন। বাকি ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এরই মধ্যে ৬জন প্রেষণে থাকলেও ডা: আছেন ৭জন। ৭ জনের মধ্যে ২জন গাইনি কনসালটেন্ট ১জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া নিয়মিত ডা. আছেন ৪জন। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর ১৮ জন থাকার কথা থাকলেও ১৮ জনই আছেন।

সিনিয়র স্টাফ নার্সের মঞ্জুরিকৃত পদ হচ্ছে ২০ জন। মিডিওয়াইফারি ৪জন। ২০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে কর্মরত আছেন ৭জন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। ৭ জনের মধ্যে ২জন প্রেষণে আছেন। মিডিওয়াইফারি ৪জনের মধ্যে ২জন কর্মরত থাকলেও ১জন শিক্ষা ছুটিতে আছেন। বাকি ২টি পদ শূন্য রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৫ জনের মধ্যে ও ২ জন কর্মরত১ জন সংযুক্তি তে আছেন। এছাড়া ২জন ল্যাব ট্যাকনোলোজিষ্ট থাকলেও তারা সদর হাসপাতালে প্রেষণে আছেন। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীর বড়ই অভাব তাছাড়া এখানে নেই কোন ওয়ার্ড বয় ও সুইপার, গতমাসে ২জন অবসরে চলে যাওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। সাময়িক সেবা দেয়ার লক্ষে পৌর মেয়র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়েছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা তাসলিমা আক্তার বলেন, মেয়েকে নিয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। বেডে আসন না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। বারান্দায় থাকলে কেহ খবর নিতে চায় না। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতাম।সেটাই ভালো হতো।

রোগী আলী হোসেন বলেন, হাসপাতালটির অভ্যন্তরের ব্যবস্থাপনা খুবই বাজে। ডা: কম থাকার দরুন রুটিন সময়ে ডা: আসেন না। তাছাড়া সকল ঔষধ বাহিরে থেকে ক্রয় করে আনতে হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শেখ আবুল হাসনাত বলেন, জনবহুল এলাকা বিবেচনায় ৫০ বেডের হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বিগত সময়ে হাসাপাতালের জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ সভায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া ভবন সংস্কার ও অবকাঠামোগত সমস্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ৫ম বার্ষিক পরিকল্পনায় ৫০ শয্যার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে তবে সেটার অনুমোদন হয় নি অধ্যবধি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটিরাঙ্গা একটি জনবহুল এলাকা এখানে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। জনভোগান্তির লাঘবে এ উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন