হ্রদ বাঁচাতে ‘কাপ্তাই হ্রদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন জরুরী হয়ে পড়েছে
দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদ বাঁচাতে কাপ্তাই হ্রদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ড্রেজিং করা না গেলে হ্রদ সংশ্লিষ্ট জীবন জীবিকা, অর্থনীতির গতি হুমকির মুখে পড়াসহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপনন কেন্দ্র (বিএফডিসি) আয়োজনে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবিদের মাঝে ভিজিএফ বিতরণ কর্মসুচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা এ মত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসস্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান এমপি।
মন্ত্রী বলেন, কাপ্তাই হ্রদের এমন হতশ্রী রুপ দেখে আমি বাকরুদ্ধ। এ হ্রদ যেন স্তব্দ ও বোবা হয়ে গেছে। যেকোন মূল্যে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য্য রুপ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য মন্ত্রনালয় থেকে যা যা করার তাই করা হবে। বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তিনি কাপ্তাই হ্রদের পুরনো রুপ যৌবন ফিরিয়ে আনতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি অনুরোধ জানান, বন্ধ মৌসুমে মাছ না ধরতে, ক্ষতিকর কাচকি জাল ব্যবহার না করতে ও ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষযক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, নাব্যতা সংকট কাটাতে ড্রেজিং জরুরী হয়ে পড়েছে। মাছের উৎপাদন বাড়াতে বেশি পরিমানে পোনা মাছ ছাড়তে হবে। মৎস্যখাত সংশ্লিষ্টদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার আন্তরিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যূৎ ও মাছ উৎপাদনে কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্ব রয়েছে। যদি পরিকল্পনামত মাছ উৎপাদন করা যায় সারা বাংলাদেশের মাছের চাহিদা পুরণ করা যাবে। ড্রেজিং হওয়া উচিত, এটা বাস্তবায়নে আমরা সমর্থন দিব। হ্যাচারীর পরিমান বাড়াতে হবে। কাপ্তাই হ্রদের পানি দুষিত হয় এমন সব কার্যক্রম থেকে সরে আসা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মোঃ জুলফিকার আলী বলেন, কাপ্তাই হ্রদ প্রাকৃতিক সম্পদে সম্মৃদ্ধ। এখন যে পরিমান মাছ উৎপাদন হচ্ছে তা অপ্রতুল। কিভাবে আরো কার্যকর করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। কার্প জাতের মাছের উৎপাদন বাড়াতে ক্রীক বা ঘোনায় চাষ পদ্ধতি বাড়ানোসহ উৎসাহিত করতে হবে।
পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, কাপ্তাই হ্রদের নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাপ্তাই হ্রদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা গেলে হ্রদের জন্য ভাল হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ অঞ্চলের আত্মসামাজিক উন্নয়নের সাথে কাপ্তাই হ্রদের উন্নতির বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ৬২ বছরে কোন ড্রেজিং হয়নি, প্রায় ৯ শত ৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কাপ্তাই হ্রদে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। জীবন জীবিকা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোহাঃ আব্দুল আলিম মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর, রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া প্রমূখ।
আলোচনা শেষে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপনন কেন্দ্র (বিএফডিসি) ঘাটের কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবিদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়।
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভুঁইয়া জানান, চলতি বছর কাপ্তাই হ্রদে ৬৫ মে. টন মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। এছাড়া ২৭ হাজার জেলেকে ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করা হবে।