১৫ বছর পর যে কারণে বহুল আলোচিত আবুল কালামের পতন

অবৈধ গরু পাচারকারী

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার রাজনীতিসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে নানা আলোচনা, সমালোচনায় তুঙ্গে ছিলেন টানা ৩ বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম। দীর্ঘদিনের পর তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনের কাছে ২,২৮৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবুল কালাম তার রাজনৈতিক জীবনে একবার যুবদলের আহবায়ক পরে একবার উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সভাপতি ছিলেন। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয় তাকে। জাতীয় রাজনীতি ছেড়ে তিনি যোগ দেন আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদে, বর্তমানে নাগরিক পরিষদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বহিষ্কৃত এই বিএনপির নেতা।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে ২০০৩ সালে প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এরপর টানা তিনবার ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী নাছির উদ্দিন ও টানা দুইবার আলীকদম সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনকে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবুল কালাম। ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনের কাছে।

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের তোপের মুখে ছিলেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে কেবল তার কিছু বেফাঁস কথাবার্তা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর মাধ্যমে আলীকদম ছাড়িয়ে দেশের মানুষের চোখ এড়ায়নি। অতি অহংকার ও নিজেকে আলীকদমের সবচেয়ে বড় নেতা মনে করা, অন্য রাজনীতিবীদদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্লের সুরে অসন্মান করা, যা ভোটাররা ভাল ভাবে নেয়নি।

NewsDetails_03

বিগত ৫ম উপজেলা নির্বাচনের পর এই আবুল কালাম এক পাহাড়ি ম্রো নারীকে নিয়ে জড়িয়ে ধরার কারণে সারাদেশে আলোচনায় ঝড় তোলেন। তার এই জড়িয়ে ধরার ছবি নিয়ে ম্রোদের একটি অংশ তার পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ায়। বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে আসা অবৈধ গরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠে, তার বিরুদ্ধে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রিপোর্ট প্রদান করে। নির্বাচনের আগমুহুর্তে গত ৩ মে আলীকদমের রেফার পাড়ায় একটি পথসভায় বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আবুল কালাম ও নিজেকে অবৈধ গরু ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচার করে বিএনপির আলীকদম উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মো.ইউনুছ। আর এই বিষয়টি নিয়ে জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।

জানা যায়, তার দীর্ঘদিনের সহচর মেনরুং ম্রো’কে অবৈধ গরু ও সিগারেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটে। বিগত বছরে মেনরুং ম্রো তার অবৈধ বিদেশি সিগারেট ব্যবসা নিয়ে বাঁধা দিতে গেলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে মেনরুংকে মারধর করে। এরপর তার দীর্ঘদিনের ম্রোদের বিশাল একটি অংশ তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ৩০০ নং আসনের এমপি, সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরকে অসন্মান করে বক্তব্য রাখা ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজাকে গুন্ড বলে সম্বোধন ও বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রদান করে অশালীন মন্তব্য করার কারনে বিএনপি সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। যার কারণে তিনি ২২৮৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

জাতীয় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে আলীকদম উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের ২১ টি ভোট কেন্দ্রের মোট ৩২ হাজার ৮০৫ জন ভোটারের মধ্যে ১৭,২১৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরমধ্যেই দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ৯ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামাল উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো: আবুল কালাম পেয়েছেন ৭ হাজার ৫১৬ ভোট। ঘোষিত ফলাফলে- ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ হাজার ১৪৬ ভোট পেয়ে তালা প্রতীক প্রার্থী বহিস্কৃত উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো: রিটন দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কফিল উদ্দিন টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৪৭ ভোট।

এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা মহিলাযুব দলের যুগ্ম আহবায়ক শিরিনা আক্তার ৮ হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়ে প্রজাপতি প্রতিকে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াসমিন আক্তার পেয়েছেন ৭ হাজার ৮২৫ ভোট। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৫৩.১৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন