আমি স্মার্টফোন হবো: এক শিশুর আবেগময় রচনা

NewsDetails_01

1_192120আমরা ছুটছি অর্থের পেছনে, অর্থের কাছে যেন আজ সবকিছুই অসহায়। আধুনিক সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আজ মায়া-মমতার বন্ধন যেন ঠুনকো বিষয় ! অনেকে বৃদ্ধ বাবা- মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বৃদ্ধা আশ্রমে, আর শিশুকে…..। লোক দেখানো এই মানবতা আর মায়া মমতা যেন বিদ্রুপ করছে ক্ষোধ আমাদের।
শিশু মানেই পরিবারে সকলের প্রিয় আদরের পাত্র। শিশু মাত্রই পরিবারের সবার ভালোবাসা আর মমতায় জড়ানো নয়নের মনি। শিশুর প্রতি আমাদের মমত্ববোধ সকল সময়, সকল অবস্থায়-অবস্থানে। শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ ও উর্বর ভূমি তার মা-বাবার কোল। শিশুর প্রতি আদর-ভালোবাসার কমতি না থাকলেও বর্তমানে আমাদের সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব আর অপরাধ প্রবনতার ঘৃন্য কিছু ঘটনা আমাদের বিবেক বোধকে দংশিত করছে। লজ্জায় মাথা নোয়াচ্ছে শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে।
আধুনিক সভ্যতার এই যান্ত্রিক শহরে অর্থ বিত্তের টানে ছুটতে গিয়ে একজন বাবা হিসেবে বা একজন মা হিসেবে আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি নিজ সন্তানকে? নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে সম্মান দেখায় না, সে আমার উম্মত নয়’- (বোখারি শরীফ)। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয় অন্যান্য সব ধর্মে শিশুর প্রতি স্নেহ-মমতার নির্দেশ রয়েছে।
কথায় কথায় আমরা বল থাকি-আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরাই আগামী দিনে সমাজ বির্নিমাণের কর্ণধার। নিষ্পাপ শিশুরা সংসারের বন্ধনকে অটুট করে কিন্তু আপনি, আমি কতটুকু করছি নতুন এই প্রজন্মের জন্য। বাবা মাকে নিয়ে এক শিশুর লেখা “রচনা” পড়তে গিয়ে যেন মনে হলো, বাবা-মা হিসাবে আপনি, আমি কতটা মানবিক?

সোশ্যাল মিডিয়া অবলম্বনে পাহাড়বার্তার পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো “আমি স্মার্টফোন হবো”

eewe_36355আমার স্ত্রী প্রাইমারি টিচার। রাতে ডিনারের শেষে আমার স্ত্রী ক্লাস ওয়ানের খাতা দেখছিলো। খাতা দেখতে দেখতে আমার মিসেসের চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে।
আমি কাছেই বসে টিভি দেখছিলাম। মিসেসের দিকে নজর যাওয়াতে দেখি আমার স্ত্রী চোখের পানি মুছছে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কাঁদছো কেনো!!!
আমার মিসেস বললো.. ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষায় এক রচনা এসেছে। “my wish”
— তো কাঁদার কি হলো!!
— সব খাতা গুলো দেখলাম। সবাই ভালো লিখেছে। –তো?
— একজনের খাতা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
— আচ্ছা বলো কি লিখেছে ওই বেবি।
মিসেস রচনা পড়তে শুরু করলো…..

আমার ইচ্ছা আমি স্মার্টফোন হবো।

আমার বাবা মা স্মার্টফোন খুব ভালোবাসে। কিন্তু আমায় ভালোবাসে না।

যেখানে যায় আমার বাবা তার স্মার্টফোন সঙ্গে করে নিয়ে যায়। কিন্তু আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যায় না।

ফোন এলে আমার মা তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন ধরে। কিন্তু আমি কান্না করলেও আমার কাছে আসে না মা।

আমার বাবা স্মার্টফোনে গেম খেলে। কিন্তু আমার সাথে খেলে না। আমি বাবাকে বলি আমায় একটু কোলে নাও না বাবা। কিন্তু বাবা আমায় কোলে নেয় না। স্মার্টফোনটাই সব সময় বাবার কোলে থাকে।

NewsDetails_03

মা কে গিয়ে বলি, মা মা চলো না আমার সাথে একটু খেলবে। কিন্তু আমার মা আমার উপর রেগে গিয়ে বলে, দেখতে পাচ্ছিস না আমি এখন তোর মামার সাথে চ্যাটে কথা বলছি।

আমার বাবা মা রোজ স্মার্টফোন টাকে যত্ন করে মোছামুছি করে। কিন্তু আমায় একটুও আদর করে না।

আমার মা যখন বাবার সাথে ফোনে কথা বলে তখন মা স্মার্টফোনে বাবাকে পাপ্পি দেয়। কিন্তু আমায় একদিনও পাপ্পি দেয়নি মা।

আমার বাবা মাথার কাছে স্মার্টফোন নিয়ে ঘুমায়। কিন্তু আমায় কোনোদিনও জড়িয়ে ধরে ঘুমায় না।

আমার মা রোজ চার পাঁচবার স্মার্টফোন টিকে চার্জ দেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে আমায় খাবার দিতে ভুলে যায় মা। কিন্তু স্মার্টফোন টিকে চার্জ দিতে ভুলে না আমার মা। তাই আমি স্মার্টফোন হবো।

আমার ইচ্ছা স্মার্টফোন হয়ে বাবা মায়ের সাথে সবসময় থাকতে চাই।
.
স্ত্রীর মুখে লেখাটি শোনার পর আমি খুব ইমোশনাল হয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম..

— কে লিখেছে এই রচনাটি ?
— আমাদের সন্তান।

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম কিছুক্ষন। অনেক কিছুই ভেবে চলেছি। আমার আর আমার স্ত্রীর চোখে তখন জলের ধারা নামতে শুরু করেছে।.

আরও পড়ুন