আলীকদমে চাকরি সরকারি হলেও ১৩ কর্মচারীর দুর্ভোগ

NewsDetails_01

জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী আইবাসের এর অনলাইন ‘পে ফিকজেক্শান’ না হওয়ায় বান্দরবান জেলার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আবাসিক ছাত্রাবাসের কর্মরত ১৩ জন কর্মচারীর দুর্ভোগ কাটছে না।

এসব কর্মচারীদেরকে ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে সরকারি চাকুরীতে নিয়মিত করেন। এরপরও অর্ধস্তন কর্মকর্তাদের কার্যকর আন্তরিকতা ও সহযোগিতা না থাকায় এসব কর্মচারীরা বৃদ্ধ বয়সেও সরকারি চাকুরীর পুরোপুরি সুফল ভোগ করতে পারছেন না।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আবাসিক ছাত্রাবাসে জেলা প্রশাসকের নিয়োগ আদেশে ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দেন।

আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় এ দু’টি ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করে তাতে জনবল নিয়োগ দেয় সরকার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত ৮ অক্টোবর ২০১৫ সালে এক পত্রে জানা যায়, আলীকদম সদর ও বালাঘাটায় স্থাপিত আবাসিক ছাত্রাবাসে কর্মরত হেড বাবুর্চি, বাবুর্চি, সুইপার, নৈশ প্রহরী, আয়া, দারোয়ান ও ঝাড়ুদার পদে ১৩ জন কর্মচারীর চাকুরী সন্তোষজনক বিবেচনায় ১৬ জুন ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি (ডিপিসি) সভার সুপারিশে চাকুরী নিয়মিত করার আদেশ দেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (অর্থ-রাজস্ব) ১৩ জুন ২০২২ তারিখে প্রেরিত এক পত্রে জানান, বান্দরবান জেলার সদর ও আলীকদম উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রাবাসে কর্মরত রাজস্বখাতভূক্ত কর্মচারীদের জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী আইবাসে ‘অনলাইন ফিকজেক্শান’ বেতন নির্ধারণ ও রাজস্ব বাজেট হতে বেতন-ভাতা পরিশোধের অনুমতি পত্র দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে।

NewsDetails_03

এ পত্রে বলা হয়, ‘আবাসিক ছাত্রাবাসে কর্মরত রাজস্বখাতভূক্ত নিয়মিতকরণকৃত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমুহের কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিশোধ করা হচ্ছে। ফলে তাদের জিপিএফ হিসেবে কর্তন, গৃহনির্মাণ অগ্রিম ঋণ কর্তন ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।’ এই সমস্যা নিরসনের জন্য সহকারি পরিচালক (অর্থ-রাজস্ব) তাঁর পত্রে এসব কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রাতিষ্ঠানিক কোড দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমুহ-এ বেতন-ভাতা খাত থেকে প্রদানের লক্ষ্যে আইবাসে অনলাইন বেতন নির্ধারণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।

এদিকে, আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে ২২ জুন ২০২২ তারিখে ও বান্দরবান সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ১৮ জুলাই ২০২২ তারিখে পৃথক দু’টি পত্রে সংশ্লিষ্ট আবাসিক ছাত্রাবাস কর্মচারীদের বেতন অনলাইনে প্রদানের জন্য আইবাসে অন্তর্ভূক্তির জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে পত্র দেওয়া হয়।

এ দু’টি পত্রে জানা যায়, এসব কর্মচারীদের জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। কারণ আইবাস পে-ফিকজেক্শান সিস্টেমে ‘আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবাসিক ছাত্রাবাস ও ‘বালাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবাসিক ছাত্রাবাস’ দপ্তরটি নেই।

এ দু’টি দপ্তরকে আইবাসে অন্তর্ভূক্ত করার সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাভূক্ত ‘স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’।

আলীকদম আবাসিক ছাত্রাবাসে কর্মরত বাবুর্চি মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ ও দারোয়ান মোঃ আব্দুল মোতালেব জানান, আমরা এখন নিরূপায়। গত ২২ জুন ২০২২ তারিখে আমাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠানকে আইবাসে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য যাবতীয় ডকুমেন্টপত্র সংযুক্ত করে স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’ এর জাতীয় কর্মসূচী পরিচালক বরাবর আবেদন করেছি। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকেও সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্যকর সুরাহা হচ্ছে না।

তারা বলেন, আমাদের অনেকে চাকুরীর বয়স সীমা দু’এক বছর বাকী আছে। এ বয়সেও যদি সরকারি চাকুরীর সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হই, তবে মরণ ছাড়া উপায় নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আইবাস সিস্টেমে এ দু’টি আবাসিক ছাত্রাবাস ও পদ উল্লেখ নেই। এ কারণে এসব কর্মচারীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে পে ফিকজেক্শান করতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাদের বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক। সম্প্রতি এ বিষয়টি সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, শ্রীঘ্রই সমাধান হবে।

আরও পড়ুন