বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের সোনালী ধান

NewsDetails_01

বান্দরবান জেলার পাহাড় জুঁড়ে জুমের ধানে সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রুপ ধারন করেছে। পাহাড়ের ভূমিতে এই জুমকে ঘিরে যাদের স্বপ্ন, পাহাড়ের চিরচারিত প্রথা জুম চাষাবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসীদের এতো সংগ্রাম-সংঘাত। সেই জুম পাহাড়ের জুমের পাকা ধানে আদিবাসীদের চোখে মুখে এনে দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

পাহাড়ীদের আদি পেশা জুম চাষ। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ী পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকে। জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি সম্প্রদায়ের অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তুত ৮ মাস তারা খাদ্যের জোগান
মজুদ করে আদিবাসীরা। পার্বত্য জেলার আদিবাসীরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাহাড়ে জুম চাষ করে আর এর ব্যতিক্রম না হলেও এবছর অতি বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের কারনে জুমের ক্ষতি হয়েছে।

বান্দরবানের সদরের বাঘমারা এলাকার জুম চাষী মং মারমা জানান, এবছর বিরুপ আবহাওয়ার কারনে  জুমের ফসল আশানুরুপ হয়নি, তারপরও জুমের ধান নিজেদের জন্য রেখে বিক্রি করে টাকা আয় করবো সেই ধান পাওয়ার মতো ফলন হয়নি।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮ হাজার ৩ শত ৭৮ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ হয়েছিলো ২০ হাজার ২শত মেট্রিক টন। চলতি ২৩-২৪ বছরে ৭ হাজার ৯শত ৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন। যা গত বছরে তুলনায় এবার ২ মেট্রিক টন ফলন কম হয়েছে। তাছাড়া জেলায় ভারী বৃষ্টিরপাতের কারণে বিভিন্ন উপজেলার অনেক এলাকায় জুম পাহাড় ধসে যাওয়ার কারনে ফলন কম হয়েছে।

NewsDetails_03

প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা, আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে। তাই জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো। শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে
পাহাড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে উঠছে জুম পাহাড়ের মাচাং ঘরে।

থানচি উপজেলার দিনতে পাড়ার বাসিন্দা দৈ লাং ম্রো জানান, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন, তখন বৃষ্টি হয়নি, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন নাই, তখন অতিবৃষ্টি। সেজন্য এবার ধান তেমন ভালো হয়নি। ১২ আড়ি ধান  বপন করে ৪০ শতক জায়গায় জুম চাষ করেছি, ৬শ আড়ি ধান পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পাবো ৪শ আড়ি ধান।

পাহাড়ীরা জুমে ধানের পাশাপাশি ভূট্টা, মরিচ, যব, সরিষা,মিষ্টি ও চাল কুমড়া, চিনার, বেগুন, কাকন ধান, মারপা, তিল, পুঁই ও টকপাতাসহ হরেক রকমের শাক সবজি চাষ করেছে। অতি বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার জুম চাষাবাদে পড়েছে বিরুপ প্রভাব।

জানা যায়, জেলার জুমিয়া পরিবার গুলো প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে। ১১ টি পাহাড়ী জনগোষ্টীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুমচাষ করে ম্রো সম্প্রদায়। আর আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারা বছরের জীবিকা সংগ্রহ করে ম্রো’রা। ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে শনিবার থেকে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। গোত্র ভেদে পাহাড়ীরা উৎপাদিত ফসল দেবতাকে উৎসর্গের মাধ্যমে এই নবান্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক এম,এম শাহ্ নেয়াজ জানান, এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে জুমিয়ারা যেসব জুমে বীজ বপন করতে পেরেছে সেসব ধান ভালো হয়েছে। এপ্রিল শেষের দিকে যারা বীজ বপন করেছে সেসব জুমের ধান পেতে এবার বিলম্ব হতে পারে। 

আরও পড়ুন