বান্দরবানে ইটভাটা বন্ধ : থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন কাজ, কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিক

NewsDetails_01

হাইকোর্টের রায়ে বান্দরবানে একের পর এক ইটভাটা বন্ধ হওয়ার ফলে জেলার বাইরে থেকে ইট সংগ্রহে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ইট এর সংকটে জেলার উন্নয়ন কাজে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে এই খাতের সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বান্দরবানে প্রতি হাজার ইট বিক্রি হয় ৯ থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকায়। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ইট ক্রয় করতে হচ্ছে প্রতি হাজার সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। জেলা সদর থেকে প্রতি ট্রাকে ৩ হাজার ইট উপজেলাগুলোতে নেওয়ার জন্য ক্যারিং খরচ ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও যা চট্টগ্রাম থেকে আনতে খরচ হচ্ছে ১৩ হাজারের বেশি টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে ৭টি উপজেলার মধ্যে সদরে ৯টি, থানচিতে ২টি, রুমায় ২টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৯টি, রোয়াংছড়িতে ২টি, আলীকদমে ৩টি ও লামায় ৪০টিসহ মোট ৬৫টি ইটভাটা রয়েছে। ২০১২ সালের সুপ্রিম কোর্টের প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫টি, লামায় ৩টি, আলীকদমে ১টি, জেলা সদরে ১২টি মোট ২১টি ইটভাটায় ইট উৎপাদন চলমান রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা থেকে ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স, ভূমি কর হিসাবে ৮ লক্ষ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। প্রতিটি ইটভাটায় অন্তত দেড়শ জন শ্রমিক কাজ করে, সেই হিসাবে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ইটভাটাগুলোতে নিয়োজিত, ইট পরিবহণের সাথে জড়িত শত শত ট্রাক শ্রমিক, তারা কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

জেলা সদরের মাঝেরপাড়া এলাকার এবিএম ইটভাটার ম্যানেজার নেছার আহম্মেদ বলেন, ইটভাটা বন্ধ থাকার কারনে আমাদের ভাটার দেড়শ শ্রমিক এখন কর্মহীন, তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরো জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় সীমান্ত সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক নির্মান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান, ব্রিজ নির্মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। হঠাৎ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে ইটের সংকটে নির্মান কাজ থমকে যাচ্ছে, অনেকে উচ্চ দামে ইট সংগ্রহ করছে চট্টগ্রাম জেলা থেকে, ফলে নির্মান ব্যয় বাড়ছে।

NewsDetails_03

বান্দরবানের ঠিকাদার জহির উদ্দিন জানান, ইটভাটা বন্ধ হওয়ায় ইট উৎপাদন কমে যাওয়ার কারনে জেলার বাইরে থেকে ইট সংগ্রহ করে নির্মান কাজ শেষ করতে ব্যয় বাড়ছে, অনেকে ইট সংকটের কারনে কাজ বন্ধ রাখছে।

গত ৯ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লাইসেন্স বিহীন ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসককে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিচ ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদেশের তিন পার্বত্য জেলার ইটভাটা মালিকেরা রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিট পিটিশন খারিজ করে দেন। পরে ইটভাটা মালিকেরা আপিল বিভাগে দুটি আপিল দায়ের করলে তা নিষ্পত্তি করে রায় দেন এবং চেম্বার কোর্টে দেওয়া স্থিতি অবস্থা বৃদ্ধি করেননি।

এদিকে এই নোটিশের পর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জেলার ৭টি উপজেলায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে ইটভাটা বন্ধ ও অর্থ জরিমানা আদায় করে ইটভাটাগুলোতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়, যার ফলে জেলায় ইটের সংকট ও হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে।

এই ব্যাপারে বান্দরবানের ইটভাটা মালিকদের একজন আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ইটভাটাগুলো বন্ধের ফলে ইতিমধ্যে জেলায় ইটের সংকট দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে পুরো জেলার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে।

আরও পড়ুন